শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চাঁদকে নিয়ে ‘বেকায়দায়’ বিএনপি

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩, ০৮:৪৫ এএম

শেয়ার করুন:

চাঁদকে নিয়ে ‘বেকায়দায়’ বিএনপি

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবু সাঈদ চাঁদের হুমকির ঘটনা নিয়ে বেজায় চটেছে আওয়ামী লীগ। এই ইস্যু নিয়ে ইতিমধ্যে দেশজুড়ে কর্মসূচি পালন করছে দলটির নেতাকর্মীরা। একাধিক জায়গায় হয়েছে মামলা। ওই ঘটনায় চাঁদ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাকে। মামলার পর চাঁদকে গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। চাঁদের মন্তব্য নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে বক্তব্য জানতে চাইলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছে না বিএনপি। তবে দলটির নেতাদের দাবি, এটা তার মুখ ফসকে বের হয়ে যাওয়া বক্তব্য।

চাঁদের এমন বক্তব্যকে কেউ কেউ গত ডিসেম্বরে ঢাকায় আমান উল্লাহ আমানের বক্তব্যের সঙ্গে মিল দেখছেন। তখন দলের সমাবেশের মতো কর্মসূচিকে কেন্দ্র হঠাৎ ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের 'আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে, অন্য কারও কথায় নয়'- এই বক্তব্য ঘিরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।


বিজ্ঞাপন


আমানের ওই বক্তব্যের পর বিএনপিকে তখন বেশ চাপে পড়তে হয়েছিল। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধরপাকড়ের মুখেও পড়তে হয়েছিল।

এবারও একই ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনে থাকা বিএনপিকে এবার বেশি ধকল পোহাতে হতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, 'বেফাঁস মন্তব্যে বিনা কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলের নেতাকর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে। সবারই উচিত বক্তব্যের সময় সতর্ক থেকে কথা বলা। এতে আলটিমেটলি দল ক্ষতিগ্রস্ত হলো।'

চাঁদের এমন বক্তব্যকে অনাকাঙ্ক্ষিতও বলছে বিএনপির কোনো কোনো নেতা। একইসঙ্গে তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ভীতসন্ত্রস্ত করার কৌশল অবলম্বন করেছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (২৪ মে) রাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মির্জা ফখরুল।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি আবু সাঈদ চাঁদের মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি অনাকাঙিক্ষত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে তাদের ভীতসন্ত্রস্ত্র করার কৌশল অবলম্বন করেছে কর্তৃত্ববাদী সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে এখন বেসামাল হয়ে উঠেছে। তাই তারা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে তাদের ভীতসন্ত্রস্ত্র করার কৌশল অবলম্বন করেছে। বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের পর গায়েবি মামলায় নাম দিয়ে জুলুম করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, আবু সাঈদ চাঁদের একটি বক্তব্যকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ঘৃণ্য অপরাজনীতি ও জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আওয়ামী নেতারা প্রায়ই বিএনপির নেতৃবৃন্দকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে আবু সাঈদ চাঁদের চার বছরের নাতনিসহ পরিবারের চার সদস্যকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানির তীব্র নিন্দা করেন মির্জা ফখরুল।

এদিকে চাঁদের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও নিন্দা জানিয়েছেন। যে কারণে হঠাৎ দেওয়া এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিএনপি কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়েছে। 

দলটির নেতারা বলছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার আগে বেফাঁস মন্তব্যে অযথা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিএনপিকে। পাশাপাশি আন্দোলনেও পিছিয়ে যেতে হয়।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে চাঁদের বক্তব্য আওয়ামী লীগের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মতো হয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে চাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন কেউ কেউ। 

গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের সময় সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা কিংবা ১০ দফা নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে।’ 

ভার্চুয়াল জগতে এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে চাঁদের ওই বক্তব্যকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ দাবি করে ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তার দাবি- চাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে তার দলের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এটাই বলার জন্য আমাদের দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে রয়েছে। কিন্তু চাঁদ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুল করেছে, তার জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।

আর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দাবি, চাঁদের বক্তব্য স্লিপ অব ট্যাং। উল্টো তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলা দেওয়ার কথা বলে সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে 'হত্যার হুমকির' অভিযোগ এনেছেন। এসবের বিচারও দাবি করেছেন।

চাঁদের এমন বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। রাজশাহীর সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর