বিএনপির আমলে মঙ্গায় দেশের অনেক মানুষ না খেয়ে মারা গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ে বিএনপির আন্দোলন-অনশন করা শোভা পায় না, বরং তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। পত্র-পত্রিকা ও রেকর্ড থেকে প্রমাণ দিয়ে বলতে পারি, তাদের শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতিবছর মঙ্গা হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ না খেয়ে থেকেছে।
সেসব মানুষদের হাড্ডিসার পান্ডুর চেহারা আমরা দেখেছি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি জোটের আমলে আশ্বিন-কার্তিক মাসে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। কিন্তু গত ১৩ বছরে আজকের দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আমলে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। না খেয়ে মানুষ মারা গেছে- এমন একটা খবরও আসেনি, ইনশাল্লাহ আর কোনোদিন আসবেও না।
আওয়ামী লীগের আমলে কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি জোট, তথাকথিত সুশীল সমাজ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ে গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। ১৯৭৪ সালে এই অপশক্তি কুড়িগ্রামের বাসন্তীকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জাল পরিয়ে দুর্ভিক্ষের অপপ্রচার ছড়িয়ে বিশ্বে দেশের ও বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছিল।
আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, বর্তমান সময়ে তেমনিভাবে বিএনপিসহ এই অপশক্তি দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ে গুজব ও অপপ্রচার ছড়াতে চাইছে। তারা ক্ষমতার জন্য ‘বাসন্তী প্লট’ তৈরিসহ তা প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই সুযোগ আর তারা পাবে না, দেশের মানুষ আর বিভ্রান্ত হবে না।
কিছু কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও দেশে খাদ্যের কোনো সংকট ও হাহাকার নেই উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সম্প্রতি কিছুকিছু নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু খাদ্যের কোনো সংকট নেই। দেশে খাদ্য নিয়ে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যার জন্য অনশন, মানববন্ধন বা হরতাল করতে হবে।
গত দুই মাসের মোটা চালের দাম বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী। কৃষকেরা এখন দাম বাড়াতে চাপ দিচ্ছে। আলুর দাম কম, কৃষকেরা দাম বাড়াতে চাপ দিচ্ছে। রোজা শুরু হচ্ছে, বেগুনের দামও স্থিতিশীল। তারপরও বর্তমান সরকার মানুষের কষ্ট লাঘবে এক কোটি পরিবারকে কম মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলির সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহা. ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মঙ্গার দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো- দেশের মানুষ যখন এগিয়ে যায়, বিশ্বের মানুষ যখন স্বীকার করে বাংলাদেশ উন্নয়নে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও উন্নয়নের রোল মডেল, তখন দেশের ভেতরে বিএনপি-জামায়াত কুচক্রীরা বাংলাদেশকে ও এ দেশের মানুষকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুজব রটনা করে, মিথ্যাচার করে ও ষড়যন্ত্র করে। দেশের ভেতরে ও দেশের বাইরে তাদের প্রভুদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হারুনার রশিদ হীরার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, সদস্য রিয়াজুল কবীর কাওছার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক। আর প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
টিএ/ডিএইচডি/আইএইচ
