সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। রমজান ও ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মসূচি নিয়ে মে দিবসের (১ মে) মধ্যদিয়ে আবারও মাঠে নামছে দলটি। এর মাধ্যমে আন্দোলনের গতি ফেরাতে চায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি।
১ মে রাজধানীতে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এদিন বড় শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় তারা। শ্রমিক সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণাও আসতে পারে বলে জানা গেছে। তবে কি ধরনের কর্মসূচি আসবে তা জানা যায়নি।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অথবা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরপর ধাপে ধাপে আন্দোলনের গতি বাড়াতে চায় বিএনপি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় না হলে পরে রোডমার্চ, লংমার্চ, অবস্থান ও ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চায়। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটও একই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে।
দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে কর্মসূচি ঠিক করা হবে। এবার বিএনপিকে পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। ‘ডু অর ডাই’ নীতির কোনো বিকল্প নেই। তাই আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতেই তারা কাজ করছেন। এর মাধ্যমে এলাকায় নিজের শক্ত অবস্থানও জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। সেই লক্ষ্যে আবারও সারা দেশে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে রোডমার্চ এবং সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের সময়গুলো কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে আর সময় দিতে চায় না বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না- এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সেই লক্ষ্যে কিছুদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এরপর ক্রমান্বয়ে বাড়বে যুগপৎ আন্দোলনের গতি। এই সময়ের মধ্যে সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে কর্মসূচি এক দফা দাবিতে পরিণত হবে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে দলটির রাজনীতি নতুন করে আলোচনায় আসে। গণসমাবেশ কর্মসূচি থেকে তারা আশাতীত জনসমর্থন এবং সাড়া পায়। একইসঙ্গে বিভাগীয় কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র- সর্বস্তরে দলীয় নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় ও উজ্জীবিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় দলটি। ২৪ ডিসেম্বর থেকে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম (একাংশ), বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ আরও কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে রমজানেও কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট।
বিজ্ঞাপন
দলটির নেতারা বলছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। আসন্ন পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও বিএনপি ‘কোনো কৌশলে’ই অংশ নিচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণ করবে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শনিবার শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুস্পমাল্য অর্পণের পর বিএনপি মহাসচিব দলের এই অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি যে কোনো রকমের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি না। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে এখানে মেয়র নির্বাচনই বলেন বা কমিশনার নির্বাচনই বলেন, আমাদের দলের কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার জনগণ জেগে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ দুর্বার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এদেরকে পরাজিত করবে এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপি ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আমরা কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করব। যখন যে ধরনের কর্মসূচি প্রয়োজনে আলোচনা করে তাই করা হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলন আরো বেগবান হবে। সরকারের আচরণের উপর নির্ভর করবে আন্দোলন কোন ধরনের হবে। সময় হলেই তা দেখতে পারবেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, আন্দোলন হবে, দেখতে পারবেন। আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি ছিল, সেগুলো শেষ হয়েছে। কর্মসূচি থাকবে, তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। সরকারের আচরণের উপর নির্ভর করবে কর্মসূচি কোন ধরনের হবে। সেটা তৃণমূল পর্যায়ে পালন করা হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমাদের আন্দোলনে রয়েছি। এ দাবি মেনে না নিলে আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাব। ধাপে ধাপে একটার পর একটা আন্দোলন আসবে। এই অবৈধ সরকার যাতে আর অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারে সে জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাব। এজন্য সর্বশেষ অবরোধ, হরতাল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি হতে পারে। কোন আন্দোলন কখন হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা আমাদের দখলে থাকবে এবং আন্দোলন চলবে।
এমই