সাধারণত রমজানে জনদুর্ভোগ তৈরি করতে পারে, এমন কর্মসূচি দেওয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বিরত থাকে। অতীতেও তেমনটা দেখা গেছে। কিন্তু এবার সেই রেকর্ড ভেঙে রমজানের মধ্যেই নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতেও ধারাবাহিক এসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে বেশকিছু আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সামনেও কিছু আন্দোলন কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে যাতে কোনোরকম শূন্যতা না হয় এ কারণেই রমজানে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মানুষকে বোঝানো যে এই রোজার মধ্যে মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে তার সঙ্গেও বিএনপির একাত্মতা রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া একদিকে দল গোছানো, অন্যদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে থাকার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
যদিও রমজানে বিএনপির কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দলটির এমন কর্মসূচি জনগণের কথা ভেবে দেয়নি বরং নিজেদের কথা ভেবেই দিয়েছে। জনদুর্ভোগ করে দলটি মানুষকে বিপদে ফেলতে চাচ্ছে।
কেন রমজানের মধ্যেই কর্মসূচি
বিজ্ঞাপন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম রোজার দিন এতিম ও আলেমদের সম্মানে দেওয়া ইফতারে কর্মসূচি ঘোষণা করার আগে বলেছিলেন, রমজানে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, তাতে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। দেশের মানুষ কষ্টে আছে। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে রমজানেও বিএনপির আন্দোলন চলমান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির রমজানের এই কর্মসূচি ঘিরে কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে দেশে তো আর আন্দোলন হয় না। উনি অবৈধ দখলদার সরকার হিসেবে বসে থাকলে তো আন্দোলন চলতেই থাকবে। আন্দোলন চলতে থাকবে যতক্ষণ অবৈধ অনির্বাচিত দখলদার সরকার পদত্যাগ না করবে। যাদের কোনো বৈধতা নেই তারা কি বলছে না বলছে এতে আমাদের কিছু আসে যায় না। দেশের মানুষের স্বার্থে আমাদের আন্দোলন। বাংলাদেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপির ১০ দফাসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের কর্মসূচিটা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে। এখন করলা ১৪০ টাকা কেজি। তরকারি কেনা যায় না, মানুষ জিনিসপত্রে হাত দিতে পারছে না। মন্ত্রীরা বলে বেড়াচ্ছে, মানুষের নাকি খাবার বেড়ে গেছে। এদিকে মানুষ খেতে পারছে না। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচিও চলবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা মেইলকে বলেন, রমজানে কখনো কর্মসূচি দেইনি। এটা যে (কর্মসূচি) আওয়ামী লীগকে ধরেছে, তাও প্রমাণিত। আমরা চাই অত্যাচারীদের গায়ে একটু জ্বালা ধরুক, তাদের মধ্যে একটু প্রতিক্রিয়া হোক। এতদিন তো টিটকারী মেরেছে আমাদের, রোজার পরে, ঈদের পরে আন্দোলন হবে। এ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত। এখন তাদের এত রিঅ্যাকশন কেন? ওনারা (আওয়ামী লীগ) যখন আন্দোলন করেছেন তখন তো রোজা ইফতার সেহেরি কোনো কিছুই মানেননি। জ্বালাও-পোড়াও করেছেন। আমরা তো সেটা করছি না। আমরা শান্তিপূর্ণ কিছু কর্মসূচি দিয়েছি যাতে মানুষের শারীরিক কষ্ট হবে না এবং রোজাদারের অসুবিধা বা অশান্তি হবে না। সেটা নিয়ে এত প্রতিক্রিয়ার কি আছে।
রমজানে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, উনি বলেছেন, ওনার জায়গা থেকে এটা বলতে পারেন। কিন্তু আমরা আহ্বান জানাব, উনি যেন ওনার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। উনি উনার রাষ্ট্রীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াক, তাহলে আমাদের এই কর্মসূচি থেকে সরতে হবে না, আমরা এমনিতেই তখন চুপ হয়ে যাব।
বিএনপির যত কর্মসূচি
বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ ও ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে ১ এপ্রিল দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের সব জেলা ও মহানগরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ৮ এপ্রিল একই দাবিতে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি করবে সব মহানগরের থানা ও জেলা পর্যায়ে উপজেলাগুলোতে। ১০ এপ্রিল একই দাবিতে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের সব ইউনিয়নে বিএনপি অবস্থানের পাশাপাশি প্রচারপত্র বিলি ও মানববন্ধন করবে।
একই দাবিতে ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগের সব ইউনিয়নে, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল, ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগে, ১৬ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব ইউনিয়নে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিএনপি অবস্থানের পাশাপাশি প্রচারপত্র বিলি ও মানববন্ধন করবে।
এর বাইরে ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, দুস্থ ও অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তাসহ বিভিন্ন গণসংযোগমূলক কর্মসূচিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে জানায় দলটি।
এদিকে রমজানে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতির মধ্যদিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের মাধ্যমে সারা দেশের কর্মীদের সংগঠিত করে সক্রিয় ও সজাগ রাখতে চায় দলটি। কেন্দ্রীয় বিএনপির ৪টি ইফতার মাহফিল ছাড়াও যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এবার ১০ সাংগঠনিক বিভাগে এই আয়োজন করবে। কৃষক দল কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ইফতার শেষ করেছে, পাশাপাশি ১০ সাংগঠনিক বিভাগেও ইফতার মাহফিল পরিকল্পনা নিয়েছে। ছাত্রদলও বিভাগভিত্তিক ইফতার মাহফিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া এবারই প্রথম ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানায় (উত্তরে ২৬টি ও দক্ষিণে ২৪টি) পৃথকভাবে ইফতার মাহফিল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি।
এমই/জেএম