দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে টানা ১৩ বছর ধরে। বছরখানেক পরে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফিরে চমক সৃষ্টি করতে চায় দলটি। এজন্য এখন আওয়ামী লীগ পুরোপুরি মনোযোগ দিচ্ছে সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে। দলটি সারাদেশকে আটটি সাংগঠনিক বিভাগে ভাগ করে আটজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগে দলকে আরও চাঙ্গা করে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার ছক কষছেন।
টানা তিন মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকার ফলে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ বেশ চাঙ্গা হয়েছে। তবে এর ফলে আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘাতের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় নেতারাই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বেপরোয়া নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ, আভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো এবং তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় সম্মেলনসহ বেশির ভাগ সম্মেলন সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীন দল। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দলকে সুসংহত করে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসার উপযোগী করার বার্তাই দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
কতটা সুসংহত আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগের আটটি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের মধ্যে টানা বেশ কয়েকবার দায়িত্ব পালন করছেন এমন সাংগঠনিক সম্পাদকও রয়েছেন। সবশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দলটির জাতীয় সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। তবে সাংগঠনিক বিভাগ রংপুরে পরিবর্তন এসেছে। আনা হয়েছে নতুন মুখ।
বর্তমানে সিলেট বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন আহমদ হোসেন। খুলনায় বি এম মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রামে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহীতে এস. এম কামাল হোসেন, ঢাকা বিভাগে মির্জা আজম, বরিশালে অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ময়মনসিংহে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং রংপুরে সুজিত রায় নন্দী।
সদ্য সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া সুজিত রায় নন্দীর ভাষ্য, রংপুরেও সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘রংপুরে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। সেখানে যেহেতু আগে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন হয়েছে, দেখা গেছে মহাজোটের স্বার্থে অনেক জায়গায় ছাড় দিতে হয়েছে। সেটা একটা বিষয়। কিন্তু সাংগঠনিক অবস্থার দিক দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
নেতাকর্মীদের এক ও অভিন্ন রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়ে নন্দী বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ হলো- যে জায়গাগুলোতে সমস্যা, ত্রুটি আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা। আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। সেখানে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। অনেকের মধ্যে মতের অমিল থাকতে পারে, সেটা স্বাভাবিক। আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই যাতে এক ও অভিন্ন থাকে সেই চেষ্টা করব।’
আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত আমরা অধিকাংশ জেলায় সম্মেলন, কমিটি গঠন শেষ করেছি। এখন প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ও জাতীয়ভাবে আরও চাঙ্গা করা, আরও বেশি গণমুখী করে তোলা। যদিও আওয়ামী লীগ গণমুখী দল। তৃণমূল পর্যন্ত আমরা সেভাবেই সম্পন্ন করেছি।’
দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন আহমেদ হোসেন। টানা চারবার দলটির সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা এই নেতার মতে, আওয়ামী লীগ বরাবরই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। ঢাকা মেইলকে আহমেদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সকল সাংগঠনিক বিভাগই শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত৷ আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্বশীল।’
একই কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তার মতে, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্তিশালী। তৃণমূলকে আরও সক্রিয় করে আগামী নির্বাচনের দিকে হাঁটতে চায় ক্ষমতাসীন দল।
কারই/জেবি/আইএইচ