রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

আন্দোলনের ‘গতি ধরে রাখতে’ নতুন কী কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি?

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

আন্দোলনের ‘গতি ধরে রাখতে’ নতুন কী কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি?

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে ডান-বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আন্দোলন সফল করতে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার ছক কষছে বিএনপি।

সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে এবং নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা উত্তর দক্ষিণের উদ্যোগে মোট চার দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। আগামীকাল শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে দলটি। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার জন্য ৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে বিএনপির।


বিজ্ঞাপন


BNPসূত্র জানায়, যুগপৎ কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতিতে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রতিবাদ, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ ১০ দফা দাবিসহ জনস্বার্থ ইস্যুতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি ও মিত্র দলগুলো। মার্চের শুরুতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। পাশাপাশি জনগণের সমর্থন আদায়ে নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ থেকে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে কর্মসূচি ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে বিএনপির। কর্মসূচি হিসেবে 'লংমার্চ', 'লিফলেট বিতরণ', 'চলো চলো ঢাকা চলো', 'মানবপ্রাচীর' বা আবারও 'গণঅনশন', জেলা পর্যায়ে 'বিক্ষোভ সমাবেশ' বা 'গণপদযাত্রা' কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। 

গত কয়েক দিনে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম (মন্টু) ও পিপলস পার্টি এবং এলডিপির সঙ্গে বৈঠককালে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে। পরে এ নিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।

BNPঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার জন্য নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি। জেল থেকে মুক্তি পাওয়া নেতাকর্মীদের আরও উজ্জীবিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে তাদের। সেই লক্ষ্যে বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শনিবার বিভাগীয় সমাবেশে ফের নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিতে চায় দলটি। এদিন দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সমাবেশে সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটাতে চায় বিএনপি। প্রচারের অংশ হিসেবে প্রতিদিনই লিফলেট বিতরণ, পথসভা, হাটসভা ও প্রস্তুতি সভা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। 

সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন


বিজ্ঞাপন


শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।

কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন; রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা আব্বাস; খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে ড. আবদুল মঈন খান; চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান; সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে বেগম সেলিমা রহমান; ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী; রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান এবং ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে থাকবেন বরকত উল্লাহ বুলু।

BNPএছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিবরা এসব সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক, সহসম্পাদক, সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্যরা স্ব-স্ব বিভাগের সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। 

আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কী বলছেন নেতারা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কখন কোন ধরনের আন্দোলন হবে সেটা সময় বলে দেবে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কোনো রাজনীতি নেই। বিএনপির জনসম্পৃক্ততা দেখে তারা এতটাই ভয় পেয়েছে যে, সে কারণে বিএনপি যখন কোনো সমাবেশ ঘোষণা করে তখন তারা (আওয়ামী লীগ) পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ আমাদের সমস্ত কর্মসূচি পালন করার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। আমাদের লিফলেট পর্যন্ত তারা বিতরণ করতে দিচ্ছে না।’ 

সেলিমা রহমান জানান, বিভিন্ন রাজনীতি দলের সাথে তাদের আলাপ আলোচনা হচ্ছে। কীভাবে চলমান আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে তারা ভাবছেন।

BNPজানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫২ বছরে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ৫২ বছরে সামরিক শাসককে আমরা বিদায় করেছি, ৫২ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে গণতান্ত্রিকভাবে। কখনো ভোটের মাধ্যমে আবার কখনো গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে; সেহেতু মানুষ আশাবাদী। এখনো একটি কর্তৃতবাদী সরকার ক্ষমতায়। সর্বশেষ কয়েকটি তথাকথিত উপনির্বাচনের নামে পুলিশ মাইক দিয়ে ভোটারদের আসতে আহ্বান করছে। এক সময় পুলিশ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ভোটারদের কেন্দ্র ছাড়া করেছে, বের করে দিয়েছে, নিরাপত্তা দেয়নি। মানুষ বর্তমান সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে ফেলছে, সে কারণে কে ভোট করছে কে করছে না এটা নিয়ে জনগণ আগ্রহী নয়। এটা একটি ভালো দিক। মানুষ সরকারের দিক থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ সরকার জনবিচ্ছিন্নতায় ভুগছে, সেজন্য কখন কোন সময় গণঅভ্যুত্থান ঘটবে এটা তারিখ দিয়ে হয় না, সিমটম (লক্ষণ)-গুলো খুবই স্পষ্ট।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া ব্যাপক উপস্থিতির লক্ষণ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে সভা সমাবেশ করছি। জনগণের অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি পালন করছি।’ সামনে জনগণের অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি আসবে বলেও জানান তিনি।

BNPবিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আশা করছি আগামীকালকে ভালো একটি সমাবেশ করতে পারবো। এরজন্য যেরকম প্রস্তুতি নেওয়া দরকার আমরা তেমন প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়েছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ দফার বাস্তবায়ন চাই। যদি তারা আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে সহিংসতার পথে যায়, তাহলে আমরা কোন পথে যাব? যদি সহিংসতার পথে আমাদেরকে হাঁটায়, তাহলে এর দায় দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। সরকার যদি আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয় তাহলে আমাদের আর কোনো কর্মসূচির প্রয়োজন নেই।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কারুজ্জামান রতন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার জন্য আমাদের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষকে সন্তুষ্ট করার মতো উপস্থিতি জানান দিতে পারব।’

এমই/জেবি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর