শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আশায় বুক বেঁধেছেন আ.লীগের বহিষ্কৃতরা, জমা হচ্ছে ক্ষমার আবেদন

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

আশায় বুক বেঁধেছেন আ.লীগের বহিষ্কৃতরা, জমা হচ্ছে ক্ষমার আবেদন

তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদ ভবন। সব জায়গায় আওয়ামী লীগের অবস্থান সুদৃঢ়। এক পদের জন্য আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। আর এই নিয়েই তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে। দল থেকে তাদেরকে বারবার সতর্কও করা হয়েছে৷ বহিষ্কার আদেশ হয়েছে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তবে সম্প্রতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় হয়তো বাকিদেরও ক্ষমার চোখে দেখবে দলটির হাইকমান্ড। ক্ষমার জন্য দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদনও করছেন অনেকে৷

গত ২১ জানুয়ারি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করার চিঠিটি। যা গত ১ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা করা হয়েছে জাহাঙ্গীর আলমকে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সতর্কও করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, আপনার বিরুদ্ধে আনীত সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

জাহাঙ্গীরের পর আরও অনেকে ক্ষমা পাচ্ছেন এমন গুঞ্জন এখন রাজনৈতিক পাড়ায়। জমা হচ্ছে ক্ষমার আবেদন।

>> আরও পড়ুন: আমি ওই পদের যোগ্য না: কাদের

জাহাঙ্গীরের আগে ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের পদ হারিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। পদ খোয়ানোর আগে কয়েক বছর ধরে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন তিনি। ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে এক ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। পরে মাদক ও ক্যাসিনো সম্পৃক্ততায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে গত বছরের শেষ দিন লোকসম্মুখে আসেন তিনি। নিজ মেয়ের বিয়েতে পুরনো রূপে দেখা গেছে তাকে। আর সেই বিয়েতে অতিথি হিসেবে দেখা গেছে সরকারের এক মন্ত্রীকেও।


বিজ্ঞাপন


২০২১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে নিজের পদ খুইয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট৷ দীর্ঘ কারাবাস শেষে আবারও লোক সম্মুখে এসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হতে দেখা গেছে তাকে।

গ্রেপ্তারের পর মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার হলেও সম্রাটের সে পদে কাউকে স্থলাভিষিক্ত কিরা হয়নি। অনেকেই মনে করছেন সম্রাট আবার নিজ পদে ফিরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটি মেয়রের মতো ক্ষমা পেতে হবে তাকেও।

>> আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে গাজীপুরের জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করল আ.লীগ

একই ধারায় রয়েছেন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজীব। তারা দুজনও আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে নিজেদের পদ হারিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে সরাসরি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজী হয়নি তারা। তবে তাদের ভাষ্য, দলের হয়ে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করতে চান তারা।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, আমি আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছি আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করতে চাই। পদের রাজনীতি কোনোদিন করিনি। আজও পদ নিয়ে ভাবি না।

শুদ্ধি অভিযানে তাদের মতো আওয়ামী লীগের পদধারী ছোট-বড় আরও অনেক নেতা তাদের পদ হারিয়েছেন। যারা বর্তমানে পুনরায় দলে ফেরার চেষ্টায় আছেন।

বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের পদ হারিয়েছেন তৃণমূলের অনেক নেতা।

তাদের মধ্যে গত বছরের ২৬ মে ভোলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ও কালমা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার রাব্বি, একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, রমাগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন এবং উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জাকির হোসেন।

দুর্নীতি, দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং মডেল লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে এমন অনেক নেতাকর্মীই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের পদ হারিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের ক্ষমা পাওয়ার বিষয়টি এখন তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার জাগাচ্ছে।

>> আরও পড়ুন: ক্ষমা পেয়েছেন সেই ডা. মুরাদ

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, বহিষ্কৃতদের ক্ষমা করার বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ক্ষমা পেতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে হবে। তিনি বিবেচনা করবেন। জাহাঙ্গীর আবেদন করেছিল।

জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও অনেক বহিষ্কৃত নেতাই ক্ষমার জন্য দলীয় প্রধানের কাছে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির এই সাংগঠনিক সম্পাদক। এখনও অনেকে আবেদন করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কারই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর