রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গৌরবের ৭৫ বসন্তে ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১৭ এএম

শেয়ার করুন:

গৌরবের ৭৫ বসন্তে ছাত্রলীগ

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার সময় নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পরিবর্তে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রাজনীতির নানা চড়াই উৎরাইয়ের সাক্ষী দেশের প্রাচীন সংগঠনটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি ৭৫ বসন্তে পা রাখল। আজ সংগঠনটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলেছিলেন, 'ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস।' সংগঠনটি যেন প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে তারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।


বিজ্ঞাপন


১৯৪৮ সালে নাঈমউদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল ছাত্রলীগ। তখন থেকেই মাতৃভাষার জন্য লড়াই শুরু করে সংগঠনটি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকায় ছিল ছাত্রলীগ।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন, যাতে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। 

১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে বাংলার ছাত্রসমাজ সারাদেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলে, যা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। 

তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন, যা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করে।


বিজ্ঞাপন


১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করত। সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগ ভূমিকা পালন করে।

দেশমাতৃকাকে পাকিস্তানের শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হন। 

সংগঠনটির বর্ণাঢ্য ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগণিত জাতীয় নেতার নাম। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে তারা উঠে এসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পদে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান উঠে এসেছেন ছাত্রলীগ থেকে। এছাড়া বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার মতো নেতারাও উঠে এসেছেন এই ছাত্র সংগঠন থেকে। 

২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সবশেষ ৩০তম সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাদ্দাম হোসেন আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। 

ছাত্রলীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।

কর্মসূচির মধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন (৪ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডিস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে ছাত্র সংগঠনটি। 

সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। 

জনভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা দুইদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ করা হবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করবে ছাত্রলীগ।

বছরব্যাপী সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে আরও ১৬টি কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ; প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে 'স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ' শীর্ষক মতবিনিময়; Concert For Smart Bangladesh আয়োজন; বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পুনর্মিলনী; 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ: গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর' শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ; Smart Bangladesh Idea Contest আয়োজন; সকল সাংগঠনিক ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা; উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশব্যাপী 'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা' শীর্ষক প্রতিযোগিতা ও জাতীয়ভাবে 'Smart Youth Camp' আয়োজন; দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে 'Short Film Competition' আয়োজন; বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে 'Development Quiz' আয়োজন; নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা' শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা; Sajeeb Wazed Joy Programming Contest আয়োজন; ‘স্মার্ট বাংলাদেশ' ও 'স্মার্ট ক্যাম্পাস' এর উপর আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স; ‘স্মার্ট বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড; দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরষ্কারপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে চা-চক্র; 'Smart Bangladesh: Our Country, Our Dream' শীর্ষক পোস্টার প্রেজেন্টেশন।

কারই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর