শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শীতেও খোলা আকাশের নিচে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের রাত যাপন

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৬ এএম

শেয়ার করুন:

শীতেও খোলা আকাশের নিচে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের রাত যাপন

আগামীকাল শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত দিনের আগেই বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন সমাবেশস্থল মাদরাসা মাঠের পাশেই ঈদগাহ মাঠে। সমাবেশে আগত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ খোলা আকাশের নিচে শীতের মধ্যে রাত্রি যাপন করেছেন। 

রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) গণসমাবেশ করবে দলটি। বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে রাজশাহীতে আসতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় স্থানীয় ও আট জেলার নেতাদের ব্যানার ফেস্টুন পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখর রাজশাহী।  


বিজ্ঞাপন


কয়েকদিন থেকে চলছে মাইকিং। পথে পথে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আসছে গণসমাবেশে। আগত নেতাকর্মীও সাধারণ মানুষের ঠাঁই হচ্ছে মাদরাসা মাঠের পাশেই ঈদগাহ মাঠে। শীতে কেউ তাঁবুর ভেতর কেউ খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন। তবে, গণসমাবেশ ঘিরে উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কয়েক লাখ নেতাকর্মী বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রাজশাহী এসে পৌঁছান। এ সংখ্যা বাড়ছেই। তারা রাজশাহীতে আবাসিক হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারে থাকার সুযোগ না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন। এছাড়া যারা যেভাবে পারছেন নিজেদের মতো করে অবস্থান নিয়ে থাকছেন। গণসমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা খোলা আকাশের নিচে শীতের মধ্যে রাত্রি যাপন করেছেন। 

বৃহস্পতিবার রাত একটায় রাজশাহী নগরীর ঈদগাঁ মাঠে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা ঈদগা মাঠের মধ্যে প্লাস্টিক দিয়ে তাবু টাঙ্গিয়ে তার মধ্যে অবস্থান করছেন। মাঠের মধ্যে চলছে নেতাকর্মীদের খাওয়া দাওয়া। শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কেউ ঘুমিয়ে কেউ গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। 

আটটি শর্তে রাজশাহীতে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেই ডাকা হচ্ছে গণপরিবহন ধর্মঘট। তাই আগে থেকেই নেতাকর্মীরা আসছেন রাজশাহীতে।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পথে পথে পুলিশি বাধার কারণে অন্তত ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত পায়ে হেঁটে নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসছেন। একে তো পরিবহন ধর্মঘট, তার ওপর নিজস্ব ও ভাড়া করা পরিবহনে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার রাজশাহী আসার পথে পুলিশি বাধার কারণে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে রাজশাহী পৌঁছান নেতাকর্মীরা। এতে তারা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন।

জানা গেছে, রাজশাহীতে গণসমাবেশের উদ্দেশে বুধবার রাতে বগুড়া থেকে বাসে রওনা দিয়েছিলেন অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী। কিন্তু পথেই তারা রাজশাহীর মোহনুপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকায় পুলিশি বাধার মুখ পড়েন।

এ ব্যাপারে বগুড়া শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মর্শেদুল মিঠন বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে বগুড়া থেকে রাজশাহী আসছিলেন। পথে কামারপাড়া এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় একটি গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। এক নেতা মাথায় রক্তাক্ত জখম হন। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সকাল সাড়ে ৬টায় তারা রাজশাহী নগরীতে এসে পৌঁছান।

একইভাবে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসার পথে বিভিন্ন স্থানে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন। পরে তারা পায়ে হেটে রাজশাহী পৌঁছান। বিভিন্ন দূরবর্তী এলাকা থেকে বহু কষ্টে নেতাকর্মীরা রাজশাহী পৌঁছার পর পদ্মা নদীর ধারে ও নগরীর অন্য ফাঁকা জায়গায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান।

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম বাদশা বলেন, বেশ কিছু গাড়ির কাগজপত্র ছিল না। এ ধরণের গাড়িতে করে লোকজন আসছিল। এসব গাড়ি গিয়ে নাশকতা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য এসব গাড়ি তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন। 

মাদরাসা মাঠ সংলগ্ন শাহমখদুম ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা কাপড়ের তাবু বানিয়ে মাঠে খড়ের ওপর জটলা করে শুয়ে রয়েছেন। তাদের শৌচকার্যের জন্য অদূরেই বাধের ওপারে নদীর বালুর ওপর তৈরি করা হয়েছে সীমিত পরিসরে অস্থায়ী শৌচাগার।

রাতে আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তি নওগাঁ থেকে রাজশাহী এসে পৌঁছান। পরনে কাফনের কাপড় পরা ওই ব্যক্তি বলেন, গণসমাবেশ স্থলে দাবি আদায় করেই তবে ঘরে ফিরবেন তিনি। তাই প্রস্তুত হয়েই এসেছেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ঘুরে ঘুরে খোলা আকাশের নিচে থাকা কর্মীদের খোঁজখবর নেন। তিনি জানান, আজকের মধ্যেই তাদের জেলা থেকে ট্রাকে করে শত শত মানুষ চলে আসবেন। পথে পথে পুলিশি বাধা রয়েছে। তারপরও নেতাকর্মীরা ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে চলে আসছেন।

রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রবি দূর থেকে আসা কর্মীদের তদারকি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন। কোনো সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টা করছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার নুরুন্নবীকে দেখা গেল মুড়িভর্তি বড় পলিথিন হাতে নিয়ে কর্মীদের ডেকে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই তার কাছে এসে চিড়া ও মুড়ি খেয়ে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি ও পানি মজুদ রয়েছে। অনেকেই চাল, ডাল, সবজি, তেল একসাথে বেঁধে নিয়ে এসেছেন। মাঠের বিভিন্ন স্থানে শুয়ে থাকা জটলার পাশে অস্থায়ী চুলায় রান্না ওঠানো হয়েছে।

মাঠে বসে কেউ রান্না করছেন খিচুড়ি, কেউবা সবজি ভাত। এই তিন দিন কী খাবেন জানতে চাইলে সমাবেশে আসা বৃদ্ধ মোতালেব জানান, পেলে খাবো না পেলে খাবো না। পরিবারের কী হবে এই তিন দিন, এমন প্রশ্নে তার উত্তর আল্লাহ দেখবেন। এমন অনেক নেতাকর্মীর তিন দিনের আবাস এখন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশের এলাকা।

এদিকে রাজশাহী নগরীর নিরাপত্তায় এরই মধ্যে প্রতিটি প্রবেশমুখে পুলিশি পাহারা বাড়ানো হয়েছে। মাদরাসা মাঠ সমাবেশ কেন্দ্রের পাশেও পুলিশ সদস্যদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিএনপির এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্টের সবকিছু ছাপিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। 

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর