শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভাসানীকে নিয়ে ‘নামসর্বস্ব’ দলগুলোর ‘টানাটানি’

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২২, ১১:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

ভাসানীকে নিয়ে ‘নামসর্বস্ব’ দলগুলোর ‘টানাটানি’

‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে পরিচিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। নতুন গজিয়ে ওঠা কয়েকটি নামসর্বস্ব দল পাল্লা দিয়ে ভাসানীর নাম ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ন্যূনতম সক্রিয়তা না থাকলেও দলের সঙ্গে ভাসানীর নাম জুড়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেয়ার চেষ্টা করছেন এসব দলের নেতারা।

রাজনীতিতে এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ভাসানীর নিজস্ব দল ছিল ‘ন্যাপ (ভাসানী)’। যা পরবর্তীতে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মওলানা ভাসানীর গড়া মূলদল হিসেবে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)’ নামে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেয়েছে। অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’ নামে আরেকটি দলও কমিশনে নিবন্ধিত। এই দুই দলের নিবন্ধন নম্বর যথাক্রমে ৯ ও ২৭।


বিজ্ঞাপন


এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)’ এর নেতৃত্বে আছেন জেবেল রহমান গানি ও গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’র (ন্যাপ) নেতৃত্বে আছেন আমিনা আহমেদ ও ইসমাইল হোসেন।

ECতবে এবার যেন ভাসানীর নাম ব্যবহার করে নিবন্ধন চাওয়া দলের হিড়িক পড়েছে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো শেষে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলগুলোর কাছ থেকে আবেদন নেয় ইসি। হাজার হাজার পৃষ্ঠা সম্বলিত আবেদন জমা দিয়েছে ৯৮টি দল। যাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকিরা একদমই নামসর্বস্ব। আবেদনকারী দলগুলোর মধ্যে চারটি দল আছে যাদের সবার নামেই ভাসানী আছে। এই চারটি দলের সবারই প্রত্যাশা তারা নিবন্ধন পাবেন কিন্তু এদের তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বললেই চলে।

তালিকায় দেখা গেছে, ভাসানীর নাম ব্যবহার করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা চারটি দল হচ্ছে- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী গ্রুপ), ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ন্যাপ (ভাসানী) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ)।

যদিও ভাসানীর নাম ব্যবহার করা নিয়ে এসব দলের কেউ কাউকে দোষারোপ করছেন না। এমন কি নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোও ভাসানীর নাম ব্যবহার করায় কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানায়।


বিজ্ঞাপন


কমিশনে নিবন্ধিত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, মওলানা ভাসানী তো সবার। কেউ তার নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল করলে বারণ করার সুযোগ নেই। তবে আমরা চাই ভাসানীর আদর্শের কথা বলে কেউ যাতে অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত না হয়। সত্যিকারের আদর্শ বাস্তবায়নে যেন কাজ করে।

যেভাবে উপদলে ভাগ হলো ভাসানীর দল

এক সময়ের আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা মওলানা ভাসানী ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। স্বাধীনতার পর ভাসানীর ন্যাপ নিজেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে একীভূত হয় জাগদলে (জাতীয় গণতান্ত্রিক দল)। যা পরবর্তী সময়ে হয়ে যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সে হিসেবে ন্যাপ (ভাসানী) বিএনপিতে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

>> আরও পড়ুন: যে প্রক্রিয়ায় নতুন দলের নিবন্ধন দেবে ইসি

পরবর্তীতে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) নামে ‘ন্যাপ (ভাসানী)’র পুনর্জন্ম ঘটে। পরে তারা যোগ দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। অবশ্য একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোট থেকে বের হয়ে যায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। ‘গাভী’ মার্কা নিয়ে তারা অংশ নেয় জাতীয় নির্বাচনেও। ১৫টি আসনে মনোনয়ন জমা দিলেও চারজনের মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

কী বলছেন ভাসানীকে কাছে টানা নেতারা

তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদের’ আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। আর সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু। তবে এই দলটির চেয়ারম্যান ছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এখন তিনি উপদেষ্টা হিসেবে আছেন।

দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইসমাইল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা মওলানা ভাসানীকে নিয়ে কাজ করি। তার আদর্শ নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন কাজ করছি। সামাজিক কাজ করেছি। বই প্রকাশ করছি। সামাজিক কর্মকাণ্ড ১২ বছর ধরে করছি। এ বছর নিবন্ধন চাইলেও গত দুই বছর ধরে আমরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছি। জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করতে চাই।

>> আরও পড়ুন: ইসির নিবন্ধন পেতে ভিপি নূরদের তোড়জোড়

একজন ভাসানীকে এত দল ব্যবহার করছে- বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি তো সবার। তাকে নিয়ে কেউ কাজ করতে চাইলে বাধা তো দেয়া যায় না। আর কারা কাজ করে সবার সঙ্গে পরিচয়ও নেই। সবার লক্ষ্য এক থাকলে একসঙ্গে কাজ করা যেত। এই দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুরান পল্টনে।

অন্যদিকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী)’ চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার। তবে তারা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম উল্লেখ করেছেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা।

এই দলটির ঠিকানা ৪৮/১ পুরানা পল্টন। যদিও অস্থায়ী কার্যালয় দেখানো হয়েছে ৩১/১ শরিফ কমপ্লেক্স, পুরানা পল্টন। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে দলটির দপ্তর সম্পাদক ইউনুস ফকিরকে ফোন করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নিবন্ধন প্রত্যাশী আরেক দল ‘ন্যাপ ভাসানী’র সভাপতি বঙ্গদীপ এমএ ভাসানী ওরফে মোস্তাক ভাসানী। দলটির মহাসচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ সেলিম। ভাসানীর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন সময় মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি করতে দেখা যায় দলটিকে।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর