বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্মরণকালের বড় সমাবেশের টার্গেট খুলনা বিএনপির

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২২, ১২:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

স্মরণকালের বড় সমাবেশের টার্গেট খুলনা বিএনপির

দুই বিভাগে সমাবেশ করে অনেকটা উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামের পর ময়মনসিংহের মতো খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাস চলাচল। নৌপথে আসা ঠেকাতে ট্রলার চলাচল বন্ধেরও অভিযোগ করা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবুও হাল ছাড়তে চান না নেতাকর্মীরা। পায়ে হেঁটে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা নেতারা বলছেন, পদে পদে বাধা এলেও স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতির সমাবেশ করতে তারা বদ্ধপরিকর।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাস বন্ধের পর ট্রলারে আসার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই খুলনা ঢুকে গেছে। কেউ আশপাশে আছে। পায়ে হেঁটে চলেও নেতাকর্মীরা স্মরণকালের বড় সমাবেশ হবে। এভাবে বাধা দিলেও খুলনায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে।’


বিজ্ঞাপন


তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির পাশাপাশি সরকারদলীয় দলের নেতাকর্মীরা সহিংসতায় জড়াতে পারেন এমন আশঙ্কাও আছে বিএনপি নেতাদের। সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ কয়েকটি ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। 

এই দাবিতে গত বুধবার চট্টগ্রাম এবং শনিবার ময়মনসিংহে বড় গণসমাবেশ করেছে দলটি। আগামী শনিবার হবে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে খুলনায় বড় ধরণের শোডাউন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, শনিবারের সমাবেশের জন্য খুলনা শহরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে  বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের মতো খুলনায়ও সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে। খুলনা বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনায় বসে সব মনিটরিং করছেন। 


বিজ্ঞাপন


তবে তাদের অভিযোগ, বাস বন্ধ করে দেওয়াসহ নানামুখী বাধার কারণে উপস্থিতিতে কিছুটা ছেদ পড়তে পারে। তারমধ্যেও মানুষ যে যেভাবে পারবে সমাবেশে অংশ নেবে এমন প্রত্যাশার কথা বলছেন নেতারা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদ, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এই গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। 

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করে বিএনপি। এরপর গত শনিবার ময়মনসিংহে বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়েছে। এভাবে ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ।

নেতারা বলছেন, খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে উজ্জীবিত হওয়ায় তারা আশার আলো দেখছেন। 

মামলা-মোকদ্দমায় আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও সমাবেশে প্রকাশ্যে আসছেন। শুধু তাই নয়, পদবঞ্চিত এবং বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরাও নিজেদের অনুসারী নিয়ে শোডাউন করার পরিকল্পনা করছেন। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলমান আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে কাজ করছেন এই বিভাগের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং দলনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। 

খুলনার গণসমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মনে ইতোমধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে বলে দাবি শামসুজ্জামান দুদুর। সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করলেও সফল সমাবেশরের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকার চাইবে গণসমাবেশ যাতে সফল না হয় সেজন্য পথ রুদ্ধ করতে। কিন্তু শনিবার খুলনায় অভূতপূর্ব সমাবেশ হবে। যেমনটি হয়েছে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে। বাস বন্ধ করলে প্রয়োজনে, সাঁতরে আসবে নেতাকর্মীরা। কোনো বাধায় কাজ হবে না।’

এদিকে কুমিল্লা ছাড়া খুলনাসহ বাকিসব সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে সমাবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার অংশ হিসেবেই সব সমাবেশে দলীয় মহাসচিবকে প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানিয়েছেন, সমাবেশ ঠেকাতে ফের ধরপাকড় ও নানা অপচেষ্টা শুরু করেছে। যশোর, বাগেরহাটে নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এতকিছুর পরও খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নেতাকর্মীদের কোনোভাবে ঠেকানো যাবে না।

এদিকে খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরব হচ্ছেন অব্যাহতি দেওয়ার প্রায় বছর হতে যাওয়া খুলনা বিভাগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সমাবেশে বড় ধরনের শোডাউন করার চিন্তা করছেন তিনি।

বুধবার রাতে ঢাকা মেইলকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিশ্বাস করি খুলনায় এরআগে যত সমাবেশ হয়েছে শনিবারের গণসমাবেশ হবে তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

সমাবেশে অংশ নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা কৌশলি উত্তর দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ যেসব দাবিতে কর্মসূচি এই দাবি আদায়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আশা করি সবাইকে দেখতে পারেন।’

বিইউ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর