শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

জাতীয় পার্টিতে হ-য-ব-র-ল!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

জাতীয় পার্টিতে হ-য-ব-র-ল!

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আভ্যন্তরীণ বিরোধ আবারও সামনে এসেছে। দলটির পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের দ্বন্দ্বে কয়েক দিন ধরে চলছে চরম অস্থিরতা। আর এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে দলের মসিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি। সব মিলে জাতীয় পার্টিতে এখন 'হ-য-ব-র-ল' অবস্থা বিরাজ করছে।

আগামী ২৬ ন‌ভেম্বর জাতীয় পা‌র্টির কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পত্নী ও সংস‌দের বি‌রোধী দলীয় নেতা এবং দল‌টির পৃষ্ঠ‌পোষক বেগম রওশন এরশাদ। গত ৩১ আগস্ট বি‌রোধী দলীয় নেতার স্বাক্ষরে পাঠা‌নো এক চি‌ঠি‌তে এই তথ‌্য জানা‌নো হ‌য়। কাউন্সিল সফল করতে দ‌লের মহাসচিব মু‌জিবুল হক চুন্নুসহ কো-চেয়ারম্যানদের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হ‌য়ে‌ছে। প্রস্তুতি ক‌মি‌টির আহ্বায়ক হ‌য়ে‌ছেন বি‌রোধী নেতা বেগম রওশন এরশাদ। এছাড়াও কমি‌টির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হ‌য় দ‌লের কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সা‌বেক মহাস‌চিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলামকে। আবার ক‌মি‌টির সদস‌্য স‌চিব করা হ‌য় বি‌রোধী নেতার রাজনৈতিক সচিব ও এরশাদ মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি গোলাম মসীহকে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন:  সুর পাল্টালেন রাঙ্গা, ফিরতে চান দলে

ওই দিন নেতাকর্মী‌দের উদ্দেশে লেখা চি‌ঠি‌তে শাহ মোয়াজ্জম হো‌সেনসহ ত্যাগী নেতা‌দের ফি‌রি‌য়ে এনে নতুন প্রজন্মের সমন্ব‌য়ে নতুন নেতৃ‌ত্বে এক‌টি শ‌ক্তিশালী জাতীয় পা‌র্টি গঠ‌নের আহ্বান জানান রওশন এরশাদ।

কাউন্সিল আহ্বানের পর দলের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিরোধী নেতার এই ঘোষণাকে অবৈধ ও অনৈতিক আখ্যায়িত করে দলটি বলে, জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকার কোনো এখতিয়ার তাঁর (রওশন এরশাদ) নেই।

দলটির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেগম রওশন এরশাদের কাউন্সিল কমিটিতে যেসব কো-চেয়ারম্যানের নাম বলা হয়েছে, তারা এ বিষয়টি জানেন না বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। কিন্তু তাদের কোনো নিজস্ব বক্তব্য কিংবা স্বাক্ষর নেই।


বিজ্ঞাপন


japa2

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন, তা সম্পূর্ণ অবৈধ-অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও কাউন্সিল ঘোষণার কোনো এখতিয়ার নেই পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের। কাউন্সিলে গঠিত একটি বৈধ কমিটি ভেঙে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ছাড়া আর কারও নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আহ্বায়ক কমিটি গঠন এবং জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করতে পারেন।

এর কিছুদিন যেতে না যেতেই গতকাল বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দিয়েছে দলটি। জাতীয় পার্টির যুগ্ন দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আজ দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। তবে কী কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি।

আরও পড়ুন: জাতীয় পার্টির সব পদ হারালেন রাঙ্গা

দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে জি এম কাদের কীভাবে রংপুরে রাজনীতি করেন, আমিও তা দেখে নেব। আমি সংসদের বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ। আমাকে রওশন এরশাদ হুইপ বানিয়েছেন, তিনি (জি এম কাদের) চাইলেও আমার এই পদ খাইতে পারবেন না। আমি দেখে নেব, উনি কীভাবে রাজনীতি করেন।

তার বক্তব্য- 'হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও জি এম কাদেরকে অনেকবার বহিষ্কার করেছিলেন। এখন তিনি কথায় কথায় অন্যদের বহিষ্কার করেন। এবার এটার শেষ দেখে নেব।'

তবে চেয়ারম্যানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার একদিন পর সুর পাল্টালেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি আমার অব্যাহতির আদেশে অখুশি নই। তবে আমি আমার বহিষ্কার (অব্যাহতি) আদেশ প্রত্যাহার চাই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যুদ্ধ করে দলে থাকা যায় না।’

এদিকে ‘জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া’ নামে একটি সংগঠনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মরহুম এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। ইতোমধ্যে এরশাদপুত্র এরিককেও এই দলের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। বিদিশা বিভিন্ন সময় সভা সেমিনার করে জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করে আসছেন। এক আলোচনা সভায় বিদিশা দাবি করেন, এরশাদ মারা গেছেন দুই বছর। তার চেয়ারে বসে জি এম কাদের 'পল্লীবন্ধু পদক' দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি করছেন। জাপার পদ ৫-১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। মনোনয়ন বাণিজ্য তো আছেই। এসব করে জি এম কাদের জাপাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।

japa33

দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের মাঝেই নতুন বিপদ সৃষ্টি করলেন আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের দল থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেসব নেতা। এলাকার নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন ‘হবু’ এমপিপ্রার্থীরা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫২ জনকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চিঠি দিয়ে এলাকায় সাংগঠনিক কাজ করার জন্য বলা হয়েছিল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে। জেলা, পৌরসভা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য বলা হলেও তারা চিঠি পেয়ে দাপট দেখানো শুরু করেছেন। নিজেদের মতো করে কমিটি ভাঙছেন, কোথাও কমিটি ভাঙতে গিয়ে জেলা-উপজেলার নেতাদের বাধার মুখেও পড়ছেন। এমন অভিযোগ কেন্দ্রে আসার পর নতুন করে আর কাউকে চিঠি দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে তাও মনিটরিং করে ভবিষ্যতে তারা সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে থাকবেন কি না তারও সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি।

সবকিছু মিলেই জাতীয় পার্টিতে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এসব বিষয় নিয়ে দলের কোনো নেতাই মিডিয়ায় কথা বলতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, এই মুহূর্তে পার্টির বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বললে পদ-পদবি নিয়ে ঝামেলা হতে পারে।

আরও পড়ুন: দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বে জাপায় ফের অস্থিরতা

তবে রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, 'চেয়ারম্যান সাহেব (জিএম কাদের) রাঙ্গার বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জেনে বুঝে চিন্তা করেই নিয়েছেন। অবশ্যই কোনো কারণ আছে। তাকে বহিষ্কার করা হয়নি, সব পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি যখন তখন হুটহাট করে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতেন, দুই দিন আগেও একটি মিডিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে দল নিয়ে বেশ কিছু কথাবার্তা বলেছেন।’

টিএই/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর