শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপির জন্য আরও ‘কঠিন’ হবে রাজপথ

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির জন্য আরও ‘কঠিন’ হবে রাজপথ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এখনও বেশ সময় বাকি থাকলেও ধীরে ধীরে মাঠের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। রাজধানীর পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকলেও তৃণমূলে সংঘাত বাড়ছে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। নতুন নতুন মামলার আসামিও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতেও মাঠে থাকার ঘোষণা বিএনপির। 

অন্যদিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও ক্রমেই কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, কোনোভাবেই সহিংসতা মেনে নেওয়া হবে না। আবার বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের তালিকাও করা হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এমন অবস্থায় সামনের দিনে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনিভূত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপির মাঠে থাকাও কঠিন হবে মনে করেন তারা।


বিজ্ঞাপন


লম্বা সময় ঘরোয়া কর্মসূচিতে সময় পার করলেও সম্প্রতি রাজপথের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। রাজধানীর পাশাপাশি এসব কর্মসূচি ধীরে ধীরে বিভাগ থেকে জেলা, এমন কি উপজেলা পর্যাায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে সাংগঠনিক টিম করে তৃণমূলে কর্মসূচি দেওয়ায় অনেকটা উজ্জীবিত দলটির নেতাকর্মীরা। যে কারণে সব ধরণের কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

কিন্তু এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, সরকারি দলের কর্মীরা হামলা করছেন। নেতাদের বাড়ি, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করছেন। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গায় অনুমতি মিলছে না। কোথাও আবার হামলার পর উল্টো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

bnp

যদিও কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে এমন সহিংসতার দায় বিএনপির ঘাড়েই দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 


বিজ্ঞাপন


দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন মানেই সহিংসতা আর সন্ত্রাস এবং জনগণের সম্পদ নষ্ট ও নিজেদের মধ্যে মারামারি করা। তারা আন্দোলন এবং নির্বাচনে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর এখন প্রতিপক্ষ হিসেবে পুলিশকে দাঁড় করিয়েছে।’

অবশ্য বিএনপি জনস্বার্থে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে সরকার বাধা দেবে না বলেও অভয় দিয়েছেন তিনি। তবে আক্রান্ত হলে পাল্টা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, ‘আমি গায়ে পড়ে আক্রমণ করব না। কিন্তু আমি যদি তাদের (বিএনপি) দ্বারা আক্রান্ত হই, তখন নিজেকে রক্ষা করতে পাল্টা জবাব দিতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ জবাব দেবে।’

আর কর্মসূচির নামে কেউ সহিংসতা সৃষ্টি করলে প্রতিরোধ করার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ।

bnp

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের এবার হচ্ছে শেষ লড়াই। এবার আমাদের জীবনমরণ লড়াই করতে হবে। হয় জীবন না হয় মরণ।’

এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি। সামনে কী হবে তা বলা দুরুহ ব্যাপার। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হয় সরকার ভয় পেয়ে ভয় দেখাচ্ছে। না হলে ভোটের তো অনেক দিন বাকি। এখনই এমন করে বাধা দেয়া কেন হবে?’

এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখনই নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ সুজন সম্পাদকের। তিনি বলেন, ‘আইনে বলা আছে চাইলে নির্বাচন কমিশন তাদের আইনে সংযোজন করতে পারবে। কারণ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভোটের সময় সমান ফিল্ড করা সম্ভব হবে না। কেউ নির্বাচনে আসার আগ্রহও পাবে না। তাই ইসির উচিত সরকারকে বলা, পুলিশকে পরিস্থিতি শান্ত রাখার কথা বলা।’

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে বাধার মুখে পড়তে হতে পারে এমন আশঙ্কা তাদের শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু সেটা এখনই এত বেশি হবে সেটা ভাবনাতে ছিল না নেতাদের। মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার নির্দেশনায় আরও সাহস পাচ্ছিলেন। যদিও পরবর্তী পরিস্থিতি বিএনপি নেতাদের চিন্তার বাইরে চলে গেছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের পরিসংখ্যান দিয়েছে বিএনপি।

bnp

দলটির দাবি, ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে গত রোববার পর্যন্ত ৪১টি সমাবেশে হামলা হয়েছে। ৪ হাজার ৮১ নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২০০ জনকে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ২৫টি স্থানে। হামলায় একজন নিহত ও ২ হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে অন্তত ৫০টি স্থানে।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘চেয়েছিলাম সরকারের কথায় ভরসা রাখতে। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। তবে এবার ডু অর ডাই। খেয়াল করে দেখবেন হামলা-ভাঙচুরের পরেও কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কমে না, বাড়তেছে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে নমনীয় মনোভাব দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে কর্মসূচিতে বিপুল উপস্থিতি পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। দলের হাইকমান্ডের চিন্তায়ও পরিবর্তন চলে আসে। এরপর থেকেই বেশি বাধার মুখে পড়ছে বিএনপি।

bnp

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের তালিকা তৈরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। আসছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে নাশকতা ঘটলে যাতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে জন্যই তালিকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

যদিও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কমিটি হচ্ছে। তাই কমিটির নেতারা কে কোথায় থাকেন সে তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে।’ এই বিষয়টি নিয়েও বিএনপিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়ম মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পাড়া মহল্লায় তালিকা করা হচ্ছে আমাদের। কারণ একটাই যাতে আন্দোলন গড়ে তোলা না যায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এরচেয়েও কঠোর অবস্থা আমরা দেখে দেখে এই পর্যন্ত এসেছি।’ 

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর