রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বে জাপায় ফের অস্থিরতা

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বে জাপায় ফের অস্থিরতা

হঠাৎ করে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিতে। দীর্ঘদিন ধরে রোগ শোকে কাতর জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও তার ভাই জিএম কাদেরের মধ্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় দলটিতে এমন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে দলে ভাঙন শুরু হতে পারে গুঞ্জনও উঠেছে।

দেবর-ভাবির এমন দ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন নয়। এরশাদের জীবদ্দশাতেও দলটিতে দুটো বলয় সক্রিয় ছিল। যা সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে এরশাদকেও। সেই ধারা এখনো আছে। তবে রওশন এরশাদের অসুস্থতার কারণে সেই দ্বন্দ্বে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। কিন্তু বুধবার রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে দলের সম্মেলনের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনায় দলের দুই বলয়ের নামগুলো।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে একাংশের নেতৃত্ব দিতে থাকেন রওশন এরশাদ। কিন্তু মৃত্যুর আগে এরশাদ ভাই জি এম কাদেরকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যান। এরপর জি এম কাদের তার ভাবিকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক করেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় সংসদে হন বিরোধীদলীয় উপনেতা।

মাঝে লম্বা সময় ধরে শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন এরশাদপত্নী। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে ব্যাংককে নেওয়া হয়। এখনো সেখানেই আছেন। মাঝে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে দেশে ফেরার পর তাকে বিমানবন্দরে ঘটা করে স্বাগত জানিয়েছিলেন জিএম কাদেরসহ অন্য নেতারা।

কিন্তু দেশের বাইরে থাকাবস্থায় দলের লোকজন খোঁজ না নেওয়ায় ক্ষোভের কথাও বলেছিলেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেছিলেন, ‘দীর্ঘ আট মাস আমি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কিন্তু পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি। বরং আমি সবার খোঁজ নিয়েছি। অথচ যাদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ ও মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া-প্রার্থনা করেছেন তারা।’

JAPA-1


বিজ্ঞাপন


গত ২৭ জুন দেশে আসার পর আট দিন ঢাকার একটি হোটেলে থেকে আবার ব্যাংকক চলে যান রওশন। জাপা সূত্রে জানা যায়, তাকে দেশে আনার পেছনে দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিচ্যুত কয়েকজন নেতা কাজ করেছেন। ব্যাংকক যাওয়ার আগে ২ জুলাই ওই নেতাদের নিয়ে রওশন এরশাদ ওয়েস্টিন হোটেলে মতবিনিময় সভাও ডাকেন। কিন্তু শীর্ষ নেতারা তা বয়কট করলে সে চেষ্টা ভেস্তে যায়।

জানা গেছে, ওই মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছিলেন সেসব নেতা।

নতুন করে অস্থিরতা যে কারণে

এদিকে বুধবার রওশন এরশাদের দেওয়া এক সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। আগামী ২৬ নভেম্বর দলের অনুষ্ঠেয় দশম সম্মেলন উপলক্ষে আট সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। কমিটিতে রওশন নিজেকে আহ্বায়ক ও দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহকে সদস্য সচিব করেছেন।

জাপার ছয়জন কো-চেয়ারম্যান-আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন, মুজিবুল হক ও সালমা ইসলামকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়ে বুধবার রওশন এরশাদের নামে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে এই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছেন রওশন এরশাদ। তিন পৃষ্ঠার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির এক জায়গায় বলা হয়, ‘জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পার্টিকে প্রস্তুত ও শক্তিশালী করতে হবে।’

এদিকে এমন চিঠি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন জি এম কাদেরের পক্ষে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির সম্মেলন আহ্বান করে রওশন এরশাদ যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন, তা সম্পূর্ণ অবৈধ, অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের এ ধরনের কোনো এখতিয়ার নেই। সম্মেলনে গঠিত একটি বৈধ কমিটি ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ছাড়া আর কারও নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ১২, উপধারা ১/২ অনুযায়ী কাউন্সিলের তারিখ, স্থান ও সময় প্রেসিডিয়াম কর্তৃক নির্ধারিত হবে। তা ছাড়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান দলের প্রেসিডিয়ামের সভাপতি। সম্মেলনের জন্য তাঁর অনুমোদনের প্রয়োজন। এর বাইরে কাউন্সিল আহ্বানের এখতিয়ার কারও নেই।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দলটির একজন কো-চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একটি চক্র সবসময় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করে। এখন যেটা হচ্ছে সেটা তারই অংশ। তবে যত কিছুই হোক জিএম কাদেরের নেতৃত্ব এখন দলে প্রতিষ্ঠিত।’

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো এরশাদের দলে ৯০ এর দশ থেকে ভাঙন শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমতের সরকারে যোগ দেয় জাপা। পরে এরশাদ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যোগ দেননি। নিজে গঠন করেন জাতীয় পার্টি-জেপি।

পরে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে এরশাদ চারদলীয় জোট ছেড়ে গেলে দলে আবার ভাঙন ধরে। দুই প্রভাবশালী নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জু ও এম এ মতিন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি গঠন করে চারদলীয় জোটে থেকে যান।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নিজের অবস্থান বদল করেন এরশাদ। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন কাজী জাফর আহমেদ। অবশ্য তার এর আগে একে অপরকে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারও করেন।

তবে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আগে এরশাদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে জাতীয় পার্টির একাংশ রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর