শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৮:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি
ফাইল ছবি

দলীয় দাবি-দাওয়া নিয়ে নিয়মিত কর্মসূচি দিলেও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে জোরালোভাবে রাজপথে তেমন সরব দেখা যায়নি বিএনপিকে। এটা নিয়ে বিএনপির ঘরে-বাইরে সমালোচনা রয়েছে। তবে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি এবার কৌশল পাল্টিয়ে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে। ২২ আগস্ট (সোমবার) থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চায় তারা। এভাবে ধাপে ধাপে জোরালো আন্দোলনে যেতে চায় দলটি।

সূত্র জানায়, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বিএনপি রাজপথে আছে- এমন বিশ্বাস তৈরি করা এবং সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরাই হচ্ছে তাদের মূল পরিকল্পনা।  


বিজ্ঞাপন


‘গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সব দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির এবং ভোলায় পুলিশ কর্তৃক গুলি করে ছাত্রনেতা নুরে আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে’ ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। সারাদেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমের নেতৃত্ব দেবেন দলের একজন সিনিয়র নেতা। সদস্য থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার কেন্দ্রীয় নেতা, সভাপতি-আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিব এবং দলের সাবেক সংসদ সদস্য। এই টিমের সমন্বয় করবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা। এসব টিম কর্মসূচি সফল করতে পদক্ষেপ নেবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এই আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে টিমপ্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, খুলনা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ফরিদপুরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সিলেট বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং রংপুর বিভাগের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ এমপিকে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে কতটা সফল বিএনপি?

কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি টিম সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষ দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করবেন।

নতুন কর্মসূচি নিয়ে যা বলছেন বিএনপি নেতারা

ঢাকা বিভাগ টিমের সমন্বয়ক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কর্মসূচি সফল করার জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি খুব ভালো রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের আলোচনা হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে। জনগণ এ সরকারকে চায় না। সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের অবস্থান নেব এবং আমাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাব।’

এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দুজন কর্মী ভোলায় শহীদ হয়েছেন। দেশে আইন কানুন বলতে কিছু নেই। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ অনিয়মের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আমরা অবস্থান নেব।’

ময়মনসিংহ বিভাগের সমন্বয়ক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই দলের তৃণমূলে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময়, যেকোনো কর্মসূচি আসবে, পালনের জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকেন। ২২ আগস্ট থেকে আমাদের এই কর্মসূচিগুলো চলবে। কর্মসূচি নিয়ে আমরা প্রতিটি জেলার সাথে যোগাযোগ করছি। জেলার নেতারে ও নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রণয়ন করছে। বিভাগীয় যে মনিটরিং সেল করে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও আমরা মিটিং করব। কীভাবে জোরদার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব।’

022

প্রিন্স বলেন, ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজের মধ্যে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করাই হচ্ছে এখন মূল কাজ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। দেশ এখন দুঃশাসনে নিপতিত, জনগণের যে দুর্ভোগ এসব কিছুর জন্য সরকার দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন; এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে তৃণমূলের কাছে আমাদের বার্তাটা পৌঁছে দিচ্ছি।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলার‌ আহ্বায়ক খাইরুল কবির খোকন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের যে কর্মসূচি এরজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা সংগঠিত করে যৌক্তিক আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে চাই। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এ সরকারের অত্যাচার নির্যাতন এগুলো থাকবে মূল ইস্যু। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কারণে মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েক গুণ বেশি। দুর্নীতি লুটপাটের কারণে এর প্রভাব মানুষের ওপর পড়েছে। দুর্নীতি লুটপাট করে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’

আরও পড়ুন: শোডাউনে কী বার্তা দিল বিএনপি?

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এখন এর মাধ্যমে আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষকে জনসম্পৃক্ত করা। মানুষকে সচেতনতা তৈরি করা যে, সরকারের হাতে মানুষ নিরাপদ নয়। এটা অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার। নিশি রাতের সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। মানুষের স্বাধীনতা নেই। তাদের কাছে কোনো কিছু নিরাপদ নয়। তাই এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখার আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এখন আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই সরকার নিশ্চয়ই পরাজয় বরণ করবে, তাই তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে এবার দিনের ভোট রাতে না করলেও ভোট চুরির মেশিন ইভিএম দিয়ে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায়।’

রংপুর বিভাগের টিম প্রধান ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বর্তমান দেশের পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য, রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।’

কী বার্তা নিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি জানতে চাইলে খুলনা বিভাগের টিম প্রধান ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তৃণমূলের কাছে আমাদের বার্তা হচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা একেবারে অচলাবস্থা বিরাজমান। সর্বক্ষেত্রে একটি নৈরাজ্য চলছে। সে কারণে এর থেকে বেরিয়ে আসার পথটা হচ্ছে মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া, মানুষকে রুখে দাঁড়ানো। মানুষকে এই আন্দোলন সম্পর্কে সজাগ করা। এটাই থাকবে আমাদের মূল বার্তা।’

এমই/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর