বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

শেষ মুহূর্তে বিতর্কের শীর্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২২, ১১:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

শেষ মুহূর্তে বিতর্কের শীর্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক

সবশেষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। তবে চাঁদাবাজির দায়ে পদ হারান ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের এই দুই শীর্ষ নেতা। এরপর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক হন লেখক ভট্টাচার্য। পরে তাদের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়। বর্তমানে সেই কমিটির মেয়াদ শেষ। শোনা যাচ্ছে- সেপ্টেম্বরে সংগঠনের সম্মেলন হতে পারে। তবে এর আগেই নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

শোকের মাস আগস্টে কোনো কমিটি ঘোষণা হবে না। তাই তড়িঘড়ি করে ৩১ জুলাই রাতে একটানা কমিটি ঘোষণা করতে শুরু করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৩১ জুলাইয়ের তারিখে পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বেশিরভাগই গণমাধ্যমে এসেছে আগস্টের প্রথম প্রহরে। তবে বিষয়টি নিয়ে ঘোর আপত্তি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের।


বিজ্ঞাপন


সেই রাতে ঘোষণা হয়- চট্টগ্রাম জেলা উত্তর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ওই কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয় ৩১৩ জনকে। যদিও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে- জেলা ও জেলা সমমান কমিটি হবে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। আবার একই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হয়। সেখানেও পদ দেওয়া হয়েছে পৌনে চারশ’ জনকে।

এতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদেরই অভিযোগ- এসব কমিটি নিয়ম নেমে দেওয়া হয়নি। কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রেও দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা পরামর্শ করা হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের পদের বলেই এই কমিটি দিয়েছেন।

এদিকে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি চিঠি এই বিতর্ককে আরও তুঙ্গে তুলেছে। যার মাধ্যমে অগণিত ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বানানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আবার খোলা চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সুবিধাও নিতে দেখা গেছে অনেককে। কেন্দ্রীয়ভাবে পদ দেওয়া হয়নি, অথচ ওই চিঠিতে নিজের নাম বসিয়ে নিজেকে কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করে বসেছেন অনেকেই। এ কারণে নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুমিত আয়াত সাহিদাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন- এভাবে খোলা চিঠি দেওয়া হবে কেন?

Chatra League


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি ঘোষণা হওয়া বিভিন্ন কমিটিতে যাদেরকে জায়গা দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। কেউ কেউ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে।

গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। শুধু মহানগর কমিটির জন্য অর্ধকোটির বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও গুঞ্জন আছে ছাত্রলীগের মধ্যে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, মেয়াদ নেই নিজেদেরই, আবার ঈদের আগে তড়িঘড়ি করে কমিটি ঘোষণার মানে আমরা বুঝি। আমরাদের কাছে তথ্য আছে- কতে লাখ টাকায় এসব কমিটি বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কমিটি ঘোষণার আগের দিন (২৬ এপ্রিল) ঢাকা জেলা দক্ষিণ পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আবার সম্প্রতি ঘোষিত ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ, কুমিল্লা, বরিশালসহ বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন বিবাহিত, মাদক কারবারি, বিভিন্ন মামলার আসামি ছাড়াও অছাত্ররা। বিষয়গুলো নিয়ে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের মত করে চলেন। তারা ভুলে গেছেন তারা একটি সংগঠনের অংশ। ছাত্রলীগকে তারা ব্যক্তি মতামতের সংগঠন বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ইচ্ছেমতো কমিটি দিচ্ছেন, সংগঠনের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছেন।’

Chatra Legue

বিষয়টিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগস্টের প্রথম প্রহরে কমিটি দেওয়াটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। আদর্শগতভাবে তারা এটা করতে পারে না। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের। কিন্তু সেটাকে এত বড় করা! এখন যে অভিযোগগুলো উঠছে, সেগুলোকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’

ইয়াজ আল রিয়াদ আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি যে চিঠির প্রচলন শুরু করেছে, হাজার খানেকের মতো চিঠি নাকি তারা ইতোমধ্যে দিয়ে ফেলেছেন। সেগুলো নাকি লাভ, লোভের বিষয়।’

বিভিন্ন সময় পদ দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন হয় এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটির দেওয়ার বিষয়ে গঠনতান্ত্রিক নিয়মরীতি আছে। সাংগঠনিক আলাপ, পরামর্শের বিষয় আছে। কিন্তু সেগুলো না করে যখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এককভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেন বা জেলা কমিটি, ইউনিট কমিটি ঘোষণা করেন, তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে।’

রিয়াদ বলেন, ‘কোনো প্রমাণ আছে কি না? আমি বলব- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ুয়া কোনো ছাত্র চুরি করবে, সে প্রমাণ রেখে চুরি করবে, এটা বলা যায় না। তবে প্রমাণ রেখে চুরি না করলেও তাদের কর্মকাণ্ডেই বোঝা যায়, জীবনাচরণ দেখলেই বুঝা যায়। তাদের ভোগবিলাসী, আরাম আয়েশ, গাড়ি-বাড়ি তারা কোথা থেকে পান?’

যদিও এসব বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বারবার ফোন করা হলেও তারা কেউ কল রিসিভ করেননি।

কারই/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর