বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রাস্তায় নামার বিকল্প নেই: খন্দকার মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২২, ০২:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

রাস্তায় নামার বিকল্প নেই: খন্দকার মোশাররফ
ছবি: ঢাকা মেইল

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা রাস্তায় সংকটের সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনোভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তাদের (আওয়ামী লীগ) পতন হবেই হবে। শ্রীলঙ্কায় দুই ভাই ১৮ বছর শাসন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অতএব রাস্তায় নামার বিকল্প নেই। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, মানুষ দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। তারা একটা পরিবর্তন চায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি। রূপরেখা জনগণের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। কীভাবে আন্দোলন হবে সেই বিষয়ে ঘোষণা আসবে।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের আয়োজনে ‘সরকার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন করতে চায় কেন?’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। 

খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংলাপকে আমরা নাটক বলেছি। আর এই নাটকে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বলেছেন তারা ইভিএম চায় না। নির্বাচন যদি দলীয় সরকারের অধীনে হয়, আজকে যারা যারা বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে, ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন একটি পোস্ট বক্স ছাড়া কিছুই নয়। 

বিএনপির এই রাজনীতিক বলেন, সংলাপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরাও তো চাই না। সুতরাং এটা তো এখানেই মীমাংসা হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারে না। তারা কীভাবে মেশিনে ভোট দেবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ এটা মানুষের তৈরি। সেখানে পেপার ট্রায়াল নেই। প্রথম থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা দূরভিসন্ধি। এটা ডাকাতির মেশিন, এখানে কেন পেপার ট্রায়াল দেবে? 

মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে কারা থাকে, তারা তো সরকারের লোক। তারাই তো ইভিএমের বাটনে চাপ দিচ্ছে। তাছাড়া সেটা বাইরে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রিজাইডিং অফিসারকে ২৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি নিজের ইচ্ছে মতো তার থেকেও বেশি ভোট কাস্টিং করেন। এটাকে তো ভোট বলে না। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে তারা আবারও নতুন পদ্ধতিতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারে। কিন্তু এটা হতে দেওয়া যায় না। কারণ যারা দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করতে পারে তারা কিনা করতে পারে?


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর ভোট ডাকাতির সুযোগ দেওয়া হবে না। লাখো শহিদের প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সেই লক্ষ্য ও চেতনা আজ ভুলুণ্ঠিত। চেতনার ফেরিওয়ালারা গণতন্ত্রকে হত্য করেছে। তারা ৭২ থেকে ৭৫ সালে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল, এখনও করছে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমতায় রেখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কীভাবে সম্ভব?

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। বিদ্যুৎখাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা লুট করছে। তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন। দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশ থেকে তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এভাবে দেশকে আমদানি নির্ভর করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। এখন তারা রিজার্ভের হিসাব নিয়েও মিথ্যাচার করছে। আইএমএফের সঙ্গে তাদের হিসাব মিলছে না। সরকার এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না। 

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- তিনি নাকি লোডশেডিংকে জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেওয়ার কথাও বলছেন। সেটা করতেও তো ৪ থেকে ৫ কোটি হারিকেন কিনতে হবে, সেই টাকাও তো তাদের নেই। আজকে সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে সংকট চলছে। শ্রীলঙ্কার যেমন চলছে, বাংলাদেশেও একই সংকট চলছে। এটা তো বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন। 

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক যে অবস্থা বাংলাদেশের ঠিক একই অবস্থায় পৌঁছেছে। শ্রীলঙ্কার রিজার্ভের শর্ট হয়েছিল বলে তারা আমদানি করতে পারেনি। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মধ্য দিয়েই শ্রীলঙ্কার সংকট শুরু হয় আমাদের এখানে অবস্থা তাই। শ্রীলঙ্কায় যেমন জ্বালানি সংকট, এখানেও তাই। পেট্রোল পাম্পগুলোকে বলে দেওয়া হয়েছে যে ডিমান্ড তার অর্ধেক দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহম্মদ সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বক্তব্য রাখেন। 

এমই/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর