সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

লোডশেডিংয়ে সরকারের ‘পতন দেখছে’ বিএনপি

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২২, ১২:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

লোডশেডিংয়ে সরকারের ‘পতন দেখছে’ বিএনপি
কোলাজ: ঢাকা মেইল

জ্বালানি সংকটে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে আনতে লোডশেডিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সরকারের পতনের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে বিএনপি নেতারা বলছেন, এর মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতি, অদূরদর্শিতা, সিদ্ধান্তহীনতা, অদক্ষতার প্রমাণ মিলেছে। এই লোডশেডিং ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সাশ্রয়ে লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেইসঙ্গে সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান সংকট কাটাতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটাকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার সংসদে ১০০ ভাগ বিদ্যুতের কথা বলেছেন এবং সংসদে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ ফেরি করলেও নেওয়ার মানুষ থাকবে না, আবার বলা হয়েছিল লোডশেডিং মিউজিয়ামে পাঠানো হয়েছে তাহলে এখন আবার কেন লোডশেডিং হবে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, রিজার্ভে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এজন্য বিদেশ থেকে তেল, গ্যাস ইমপোর্ট করতে পারছে না, এলসি করতে পারছে না। এজন্যই লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ ও লোডশেডিংয়ের জন্য সরকারের লুটপাট দায়ী। জনগণ সবকিছু বুঝে, এসব করে আর ধোঁকা দেওয়ার সুযোগ নেই।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সোমবার (১৮ জুলাই) কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও লোডশেডিংয়ের জন্য সরকার লুটপাট করেছে বলে দায়ী করেছেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক আর না হোক, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিকরা টাকা পাবে। সরকার ডলার পাচার করে তাই এখন ডলার সংকটের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লোডশেডিং সরকার পতনের কারণ হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সরকার তো অনেক রকমের সিদ্ধান্ত নেবে। যখন দুর্নীতি করে মানুষের টাকা লুটপাট করা হয়েছে তখন তাদের এসব খেয়াল ছিল না। এখন তারা মানুষের জীবনের ওপর কষ্ট দিচ্ছে। এই সংকট আসবে এটা আমরা অনেকদিন আগে থেকেই বলে আসছি। লুটেরা সরকার ইচ্ছেমতো তাদের নিজেদের লোকজনকে খাইয়ে সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মানুষ যে অত্যাচারিত হচ্ছে এটা তার আর কতদিন সহ্য করবে? এখানে আর কিছু বলার নেই।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং সরকারের কুট চাল। আজকে দেশ সত্যিকার অর্থেই অর্থনৈতিক ক্রাইসিসের মধ্যে পড়ে গেছে। এটার জন্য পুরোপুরিভাবে সরকার দায়ী। সরকার রাবিশভাবে জনগণের অর্থ ব্যয় করেছে। জনগণের অর্থ ব্যয় করার জন্য, টোটালি সরকার কিছু লোকের ওপর নির্ভরশীল; যাদের লাঠির শক্তি, কলমের শক্তি দিয়ে টিকে আছে তাদের পেট মোটা করেছে। কিন্তু জনগণের পকেট কেটে নিয়েছে।

 

টুকু বলেন,আগে বাংলাদেশের মানুষ লোডশেডিং দেখেছে এখন, মিউজিয়ামে যাওয়া লোডশেডিং আবার ফেরত আসতেছে। আগে লোডশেডিংয়ের জন্য জনগণকে পে করতে হয়নি এখন মিউজিয়াম থেকে লোডশেডিং ফেরত এনে জনগণকে পে করতে হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন পে করতে হবে জনগণকে?

বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকার লোডশেডিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা আসলে জনগণকে এক ধরনের বুঝ দেওয়ার চেষ্টা। লোডশেডিং দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এজন্য পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস দরকার। পেট্রোল ডিজেল ও গ্যাস আমাদের ক্রয় করতে হবে। এজন্য টাকা দরকার। রিজার্ভ সম্পর্কে সরকার আগেই ধারণা দিয়েছে কিন্তু সত্য কথা বলে নাই। রিজার্ভে সংকট দেখা দিয়েছে টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, সেজন্য পেট্রোল ডিজেল গ্যাস ক্রয় করতে পারছে না। এজন্য বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘স্বাভাবিক কারণে সাময়িকভাবে মনে হতে পারে আমরা বাহাদুরি করছি। এই লোডশেডিং ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। কারণ শুধু মানুষের জনজীবন নয় ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আমি ঘরের মধ্যে হাত-পা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। আমার কাছে কেন যেন মনে হয় এই লোডশেডিং সরকারের পতনের কারণ হতে পারে।’

বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, লোডশেডিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অযৌক্তিক। সরকারের দুর্নীতি, অদূরদর্শিতা, সিদ্ধান্তহীনতা, অদক্ষতার প্রমাণ করেছে। এতদিন পর্যন্ত শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলেছে এখন লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে শতভাগ বিদ্যুতায়নের যে বক্তব্য তা ছিল অন্তঃসারশূন্য। দেশে যে প্রকৃত অর্থনৈতিক সংকট চলছে এটার প্রতিফলন।

ইমরান সালেহ বলেন, লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বঙ্গভবন, গণভবন, সচিবালয়, সরকারি অধিদফতর, মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি, অফিসের এসি বন্ধ এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়ে তারপর জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলা উচিত ছিল। এমনিতেই গ্রামাঞ্চলে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে এখন আবার লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দিয়ে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হচ্ছে। জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এর বিচার তারা একদিন করবে।

এমই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর