রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

তিন বছরেই জাপা থেকে ‘হারিয়ে গেছেন’ এরশাদ!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২২, ০২:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

তিন বছরেই জাপা থেকে ‘হারিয়ে গেছেন’ এরশাদ!

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ব্যক্তিত্ব, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রয়াত হয়েছেন তিনবছর আগে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জাপার নেতাকর্মীরাও তার মৃত্যুর দিনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করেন। কিন্তু তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে এসে যেন তাতে অনেকটা ছেদ পড়েছে। সাদামাটাভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে পালন হয়েছে এই দিনটি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদেরও যোগ দেননি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির প্রথম আয়োজনে।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) কাকরাইলের কার্যালয়ে সকাল ৮টায় দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা অল্প কিছু নেতাকর্মী নিয়ে এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

অবশ্য বিকেলের দোয়ার আয়োজনে জিএম কাদের থাকবেন বলে জানা গেছে। যদিও নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা ধরণের কানাঘুষা চলছে। কেউ আবার বলছেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে দলের চেয়ারম্যান শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেননি।

অন্যদিকে নিজ এলাকা রংপুরে যেখানে সমাহিত করা হয়েছে সেখানে কবর জিয়ারত করতেও জাপা চেয়ারম্যানের কোনো কর্মসূচির কথা জানা যায়নি। অবশ্য দলের প্রভাবশালী নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা ও রংপুরের দলীয় মেয়র সেখানে কর্মসূচির আয়োজন করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে জিএম কাদের ছাড়াও প্রয়াত এরশাদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কেউ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেননি। যা নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে।


বিজ্ঞাপন


এরশাদের ছেলে সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ তার মা রওশন এরশাদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন।

এছাড়াও দলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জিএম কাদেরের স্ত্রী শরিফা কাদের, ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার (যুব সংহতির আহ্বায়ক), এরশাদের ভাগনে আহসান আদেল রহমান এমপি (ভাইস চেয়ারম্যান), জিএম কাদেরের নাতি অ্যাডভোকেট সাকিব রহমানসহ (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক) স্বজনদের মধ্যে যারা দলে আছেন কেউ ছিলেন না শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানে।

যদিও আসিফ শাহরিয়ার রংপুরের দোয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষ নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একজন কো-চেয়ারম্যান ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে পুরো আয়োজন যেভাবে হওয়া উচিত ছিল সেখানে পরিকল্পনায় কিছুটা বিচ্যুতি হয়েছে এটা অস্বীকার করবো না। তবে এরশাদ সাহেবের প্রতি আমাদের কারো কোনো শ্রদ্ধার কমতি নেই।

যদিও জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দাবি মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি এভাবেই সাজানো হয়েছে। বিকেলে দলের চেয়ারম্যান কাকরাইলের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

অন্যদিকে সকালের আয়োজনে দলের ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ৩ জন এবং ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২ জন উপস্থিত ছিলেন।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ছাড়াও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করা হচ্ছে। বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। পরে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।

এছাড়াও শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর শ্যামপুর জুরাইন রেলগেটে এরশাদের স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন জি এম কাদের।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

যদিও দলের চেয়ারম্যান বা এরশাদের স্বজনদের মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজনে অংশ না নেওয়ার পেছনে ব্যাখ্যায় দিয়েছেন জাপার কোনো কোনো নেতা।

জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব (খুলনা বিভাগ) সাহিদুর রহমান টেপা ঢাকা মেইলকে বলেন, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ হলেন আমাদের আইডল। তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কারো কমতি নেই। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগ রেখে আমরা তাকে স্মরণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের শ্রদ্ধা জানাতে না আসলেও তিনি বাদ ফজর দোয়া করেছেন। শ্রদ্ধা জানানোর চেয়ে দোয়া করা উত্তম।

বিকালের দোয়া অনুষ্ঠানে জিএম কাদের যোগ দেবেন এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢিলেঢালা আয়োজন বলতে যদি গরু-ছাগল জবাই করে হাজার হাজার মানুষকে না খাওয়ানোর কথা বুঝানো হয় তাহলে তো হবে না। সারাদেশেই মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয়েছে।

আর জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি এরশাদ সাহেবকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে। যদিও তিনি সবসময় আমাদের কাছে সমান শ্রদ্ধার। তারপরও যে যেভাবে পারছে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার চেষ্টা করছে। যারা আসতে পারেননি তারা হয়তো নিজ নিজ অবস্থান থেকে পালন করছেন।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর