আজ থেকে ২২ বছর আগে, ২০০০ সালের ১২ জুলাই। চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কে দিনেদুপুরে আড়াআড়ি বাস রেখে মাইক্রোবাস আটকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ আটজনকে, যা ‘এইট মার্ডার’ হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে, শিবিরকর্মীরা সেই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
সে সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের খুনের এই ঘটনা তখন দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরে যান এবং সেখানে গিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার কালামিয়ার বাজারে মহানগর ছাত্রলীগের এক সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা। পথে তারা শিবিরের হামলার মুখে পড়েন। শিবিরের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পাঁচজন। তারা হলেন- মো. হাসিবুর রহমান হেলাল, রফিকুল ইসলাম সোহাগ, জাহাঙ্গীর হোসেন, আজিজুল ইসলাম বাবু, গাড়িচালক মনু। পরে হাসপাতালে মারা যান আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর আলম ও জাহিদ হোসেন।
এ ঘটনায় মামলা করেন নিহত এক ছাত্রলীগ নেতার ভাই। ২০০৫ সালে গ্রেফতার হন আসামিরা। পরে জামিন নিয়ে আসামিদের অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে যান। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ২০১২ সালে দিল্লি থেকে এক আসামিকে ফেরত আনা হয়।
হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। দণ্ডিত অপর তিনজন হলেন- আলমগীর কবির ওরফে মানিক, আজম ও মো. সোলায়মান। তারা সবাই ছাত্রশিবিরের কর্মী।
২০০৮ সালে দেওয়া নিম্ন আদালতের এই রায়ের পর ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল হাইকোর্ট আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে খালাস দেয়। তবে আপিল না করায় এই মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ নিয়ে পলাতক তিন আসামির বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে তাদের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই তিন হলেন- এনামুল হক ওরফে এনাম, মো. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ওরফে রিমন ওরফে ইমন ও হাবিব খান।
ঘটনার ২২ বছর। অথচ এ বিষয়ে কোনো কর্মসূচি নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সারা বছরের যত কর্মসূচি রয়েছে, তার মধ্যে একটি ১২ জুলাই। তবে, কখনোই তা কেন্দ্রীয়ভাবে পালন করা হয় না।
দিনটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি না থাকার পাশাপাশি সংগঠনটির ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ইন্দ্রনীল শর্মা ঢাকা মেইলকে বলেন, 'কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো অনুষ্ঠান নেই। চট্টগ্রামে সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হবে। এটা তারা প্রতি বছরই করে।'
তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ঢাকা মেইলকে জানান, প্রতি বছরই ছাত্রলীগের উদ্যোগে দিনটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে পালন করা হয়।
সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, 'আমি যখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম তখন দিনটি পালন করা হতো। আমার পরে যারা ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিল তারাও পালন করেছে। এবার ঈদের মধ্যে হওয়ায় হয়ত সেভাবে পালন করা হচ্ছে না। তবে দিবসটি পালন করা হয় না, এ কথাটি সঠিক নয়।'
কারই/জেবি

