একযুগের বেশি সময় নিজ মাতৃভূমিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে আগমন ঘটেছে নেতাকর্মীদের। বাড়তি এ জনসমাগম ও রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেখা গেছে বাড়তি নিরাপত্তা। সড়কে বেড়েছে পুলিশের চেকপোস্ট সংখ্যাও।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে পূর্বাচল কেন্দ্রিক আশেপাশের এলাকায় এই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
বিজ্ঞাপন
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড (৩০০ ফিট) এলাকায় করা হয়েছে সংবর্ধনার আয়োজন। সেখানে আগে থেকেই দলে দলে দলে যাচ্ছে নেতাকর্মীরা। আর তাই সংবর্ধনার স্থানকে নিরাপদ রাখতেই নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
সরেজমিনে, ধানমন্ডি, বিজয় স্বরণী ও গুলশান লিংক রোডে দেখা যায় পুলিশের তৎপর অবস্থান। মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে থামিয়ে চেক করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরকম চিত্র আরও দেখা যায় মহাখালী, বারিধারা, কূটনৈতিক এলাকা, কারওয়ান বাজার, পান্থপথসহ অন্যান্য এলাকায়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই এই বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার রোডের চেকপোস্টে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা প্রতিদিনই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করি। এছাড়া আজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসবেন, ওনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা রাজধানীতে প্রবেশ করবেন, এতে রাজধানীর নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটতে পারে। এজন্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় একটু বেশি তল্লাশি করা হচ্ছে।
এদিকে দায়িত্বরত গুলশান থানার এএসআই আব্দুল মান্নান বলেন, সাধারণ দিনে এই রাস্তায় (গুলশান লিংক রোড) একটি চেকপোস্ট থাকে। কিন্তু সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে চেকপোস্ট সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কোনো ধরনের নাশকতা যাতে না হয় সেদিকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম পুরো ঢাকা শহরেই পরিচালনা করা হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
বিজ্ঞাপন
নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের এ ধরনের কার্যক্রমকে ইতিবাচক হিসাবে নিচ্ছেন রাতে চলাচলকারী যাত্রীরা। তারা বলছেন, সারা দেশে অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। এ অপরাধের লাগাম টানতে হলে এ ধরনের তল্লাশি কার্যক্রম প্রতিনিয়ত করতে হবে। সাময়িকভাবে বিরক্ত লাগলেও নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন তারা।
জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) একগুচ্ছ ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তারেক রহমানকে অভ্যর্থনাকারীরা কোনও ব্যাগ, লাঠি ইত্যাদি বহন করতে পারবেন না। তারেক রহমানের গাড়িবহরে যুক্ত হতে পারবেন না। মোটরসাইকেল নিয়ে কোনোক্রমেই গুলশান, বনানী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান বা চলতে পারবেন না।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় নেমে প্রথমে ৩০০ ফিটে নিজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারেক রহমান। সেখানে একমাত্র বক্তা হিসেবে বক্তব্যও দেবেন। এরপর যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন মা খালেদা জিয়াকে দেখতে।
পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যাবেন তারেক রহমান। সেখান থেকে যাবেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে। একই দিন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শরীফ ওসমান হাদির কবরও জিয়ারত করবেন তিনি।
এদিকে তারেক রহমানের সংবর্ধনাকে ঘিরে ৩০০ ফিটে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। এই অনুষ্ঠানে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম হবে বলে আশা করছে দলটি। ইতোমধ্যে সংবর্ধনাস্থলে কয়েক লাখ নেতাকর্মী চলেও এসেছেন।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় তারেক রহমানের ওপর। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি সবগুলো মামলা থেকে জামিন পান। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্রে আর ফিরতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সব বাধা দূর হয়ে যায়। অবশেষে বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কয়েক ঘণ্টা বাদেই ফিরছেন তিনি।
এমএইচএইচ/এজে

