বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গণভোটের অধ্যাদেশ অসাংবিধানিক: ইসিকে জাসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

গণভোটের অধ্যাদেশ অসাংবিধানিক: ইসিকে জাসদ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের জন্য জারি করা অধ্যাদেশকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। সংবিধান লঙ্ঘনের মতো কোনো অসাংবিধানিক ও বেআইনি কার্যক্রমে যুক্ত না হতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
 
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনকে লেখা এক চিঠিতে এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছে জাসদ। দলটির একটি প্রতিনিধি দিল চিটি নিয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে।
 
সিইসিকে লেখা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান ও ওবায়দুর রহমান চুন্নুর চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের স্পেশাল রেফারেন্স নম্বর ০১/২০২৪-এ ব্যক্ত মতামত অনুসারে ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা’ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, ‘নির্বাহী কার্য পরিচালনার সীমা অতিক্রম করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘গণভোট’ আয়োজনের মতো কোনো ‘নীতিগত’  সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নেই । জাসদ মনে করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(১)(খ) অনুসারে গণভোট আয়োজন বিষয়ে কোনো অধ্যাদেশ জারি করা অসাংবিধানিক। 
 
জাসদ আরো মনে করে, সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত সংবিধানের ‘সংবিধান সংশোধন’ বিষয়ক অনুচ্ছেদ ১৪২(ক)(আ) অনুযায়ী অসাংবিধানিক। জাসদ মনে করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংবিধান লংঘনের মতো কোনো  অসাংবিধানিক ও বেআইনি কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া অসমীচিন।
 
চিঠিতে আরো বলা হয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, একদিকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এক পক্ষকে সকল আইনের উর্ধ্বে রেখে "ইনডেমনিটি" বা "দায়মুক্তি" প্রদান করে সংবিধান লংঘন করা হয়েছে এবং অন্যদিকে অপর পক্ষকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য হাজার হাজার গায়েবি মামলা দায়ের করার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংসদ নির্বাচন অসম্ভব করে দেয়া হয়েছে। জাসদ সুস্পষ্টভাবে মনে করে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা ছাড়া জাতীয় সংসদের অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না।
 
এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ নিবন্ধিত বিভিন্ন দলের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। এখনও বিভিন্ন জেলায় জাসদের কার্যালয় সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্বে রয়েছে। নিবন্ধিত আরো বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের কার্যালয় মব সন্ত্রাসীদের দখলে রয়েছে। রাজনৈতিক

কার্যালয় দখলমুক্ত না করলে এবং রাজনৈতিক নেতাদের উপর সারাদেশে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ কখনোই তৈরি হবে না।
 
অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশে রাজনীতিতে যেহেতু ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ তাই ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাবার বা নির্বাচন করার কোনো অধিকার নেই। জাসদ উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিতে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুসরণ করছে না।
 
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ আরো মনে করে যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে পুলিশ ও এসএসএফ-এর লুণ্ঠিত অস্ত্র, পাচার হয়ে আসা অস্ত্র, এয়ারপোর্ট থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র সহ সকল অস্ত্র পুনরুদ্ধার ব্যতীত রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পরিবেশ তৈরি হবে না। উপরন্তু নির্বাচনের আগে গণহারে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। অস্ত্র উদ্ধার ও মব সন্ত্রাস দমন ব্যতীত কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।
 
চিঠিতে আরো বলা হয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে কেবলমাত্র উল্লিখিত সাংবিধানিক ও আইনী বাধ্যবাধকতার আওতায় দেশে জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। উল্লিখিত সাংবিধানিক ও আইনী নিশ্চয়তার অধীনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলাপ আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি, নির্বাচনী আইন ও বিধি-ব্যবস্থার সংস্কার, নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্তনগ্রহণ করেই কেবলমাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
 
এমএইচএইচ/ক.ম 


বিজ্ঞাপন


 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর