সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও তার কাঠামো এখনও সক্রিয়: জোনায়েদ সাকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও তার কাঠামো এখনও সক্রিয়: জোনায়েদ সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘দেশে আবারও ভয় ও নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা চলছে। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও তার কাঠামো ও পদ্ধতি এখনও সক্রিয় রয়েছে। নতুন করে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী গণমাধ্যমে হামলা, সহিংসতা ও মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা মিলনায়তনে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক যৌথ প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মানুষকে হত্যার হুমকির মধ্যে রাখা, গণমাধ্যমে হামলা চালানো এবং সারাদেশে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা দেশকে আবার পুরোনো ভয়ের রাজত্বে ফিরিয়ে নিতে চাওয়ারই অংশ। যেভাবে আয়েশাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যেভাবে ময়মনসিংহে দীপু দাসকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে— এই ঘটনাগুলো থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, একটি গোষ্ঠী নতুন করে আরেকটি ভয়ংকর রাজত্ব কায়েম করতে চায়। আমরা দেখছি, দুটি চরমপন্থা আবার এক বিন্দুতে মিলছে। একটি ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করা গেলেও ব্যবস্থা এখনও বদলায়নি। খুব দ্রুত আরেকটি ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামনে সরাসরি না এসে গোষ্ঠী তৈরি করা এবং মনে করানো যে জনতার নামেই তারা কাজ করছে। তারা নিজেদের কিছু গোষ্ঠী দাঁড় করায়, জোর করে নিজেদের আদর্শ চাপিয়ে দিতে চায়। ধীরে ধীরে সেই সহিংসতার ভেতর দিয়েই তাদের রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ ঘটে। এখন বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নিতে হবে— আমরা ফ্যাসিবাদের পথে যাব, নাকি গণতন্ত্রের পথে যাব।’

জুলাই অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে সাকি বলেন, ‘এই আন্দোলনের স্পষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। শহীদের রক্ত, আহত যোদ্ধা ও অংশগ্রহণকারীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে, তা হলো একটি নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত। সেই লক্ষ্যকে সামনে না রেখে যদি জুলাইয়ের নাম ব্যবহার করে বা কোনো হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে নতুন ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে পুরো গণঅভ্যুত্থানকেই ধ্বংস করার অপচেষ্টা চলবে।’


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। এই তিনটির কোনো একটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা মানেই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ভেঙে দেওয়া। নির্বাচন ছাড়া সংস্কার বাস্তবায়নের কোনো জায়গা থাকে না। তাই নির্বাচন এখন বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ এবং অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রধান মাধ্যম। নির্বাচন বানচাল করাই এখন ফ্যাসিবাদী তৎপরতার মূল লক্ষ্য।’

জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দলাদলি ও বিভক্তি যদি চলতেই থাকে, তাহলে যে দলগুলো ভাবছে তারা এর ফায়দা নেবে, তারাও শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত হবে। ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়। আজ কয়েকশ’ লোক হেলমেট পরে তাণ্ডব চালাতে পারছে, কারণ রাজনৈতিক অনৈক্য তাদের সাহস জোগাচ্ছে।’

সরকারের ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকারের রহস্যজনক নীরবতা সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়। অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে, সবার সমর্থন নিয়ে আপনারা ক্ষমতায় আছেন। যদি মনে করেন, সরকার একটি পক্ষের দ্বারা পরিচালিত হবে, তাহলে আপনারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তির বৈধতা হারাবেন।’

শেষে তিনি বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে, যেমন জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। গণমাধ্যমে হামলা ও মব ভায়োলেন্সের বিচার না হলে সেটাই সরকারের ব্যর্থতার চূড়ান্ত রায় হবে। আমরা পরিপূর্ণ অ্যাকশন চাই।’

এএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর