ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর বক্তব্যে বারবার উঠে আসে জনগণের অধিকার আর রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির প্রশ্ন। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে দেশের প্রশাসনের দুর্নীতি ও আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার কথাও তুলে ধরেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। জুলাই আন্দোলনে তাঁর স্লোগানে যেমন প্রকম্পিত ছিল রাজপথ, তেমনি অভ্যুত্থানের পরও তিনি ছিলেন সবার আগে। গত সোয়া এক বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলোধুনো করেছেন।
এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়—এটি মানুষের। দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচার যখন স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন নীরবতা অপরাধে পরিণত হয়। তাই তিনি মানুষকে ভয় ঝেড়ে ফেলে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তাঁর বক্তব্যে শাসনব্যবস্থার ভণ্ডামি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষা শোনা গেছে।
উন্নয়নের নামে যে অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তার হিসাব জনগণ চাইবেই। শ্রমিকের ঘাম, কৃষকের ফসল আর তরুণের স্বপ্নকে অবহেলা করে কোনো উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না—এই বার্তাই তিনি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে।
শরীফ ওসমান হাদী শিক্ষার্থী ও তরুণদের কাছে ছিলেন প্রতিবাদের আইডল। ফলে তাঁদের উদ্দেশে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ভবিষ্যৎ কারও দান নয়; তা আদায় করে নিতে হয় সচেতনতা ও সংগঠনের মাধ্যমে। তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, নৈতিক রাজনীতি এবং নাগরিক ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন। ভয় নয়, যুক্তি ও সাহসই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি—এই বিশ্বাস তিনি বারবার উচ্চারণ করেন।
তাঁর বক্তব্যে আশার সুরও ছিল।
বিজ্ঞাপন
ইতিহাস সাক্ষী—মানুষ জাগলে অন্যায় টেকে না। ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মর্যাদার রাষ্ট্র গড়তে হলে সবাইকে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। ইনকিলাব মানে ধ্বংস নয়; ইনকিলাব মানে অন্যায়ের অবসান আর মানুষের সম্মান প্রতিষ্ঠা—এ কথা বলেছেন তিনি।
যেখানে আওয়ামী লীগের শাসন ও রাজনীতির কড়া সমালোচনা করতে অনেকে ভয় পেতেন, সেখানে ওসমান হাদী ছিলেন নির্ভয়। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে বলেছেন, আওয়ামী লীগ বছরের পর বছর ক্ষমতার দম্ভে জনগণকে তুচ্ছ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে খেলেছে এবং তারা নিজেরাই সেই চেতনাকে দলীয় স্বার্থে বন্দি করেছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, ভিন্নমত দমন করা আর রাষ্ট্রকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা—এটাই আজ তাদের শাসনের পরিচয়। জনগণ আর স্লোগানে বিশ্বাস করে না, তারা জবাব চায়—এই কথাও তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে।
তিনি বারবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিজেকে গণতন্ত্রের ধারকবাহক মনে করে, অথচ বিরোধী মত মানেই ছিল তাদের কাছে শত্রু। ক্যাম্পাস থেকে রাজপথ—সবখানেই দলীয় দখলদারিত্ব কায়েম করে তরুণদের ভবিষ্যৎকে জিম্মি করা হয়েছে। ভয় দেখিয়ে, মামলা দিয়ে, নিপীড়ন করে ইতিহাস থামানো যায় না—এই সত্য আওয়ামী লীগ বারবার ভুলে যায়।
জনগণকে জাগাতে ও ইতিহাসে আওয়ামী লীগের পরিণতি নিয়ে তিনি বলেছেন, ইনকিলাব মানে আগুন নয়; ইনকিলাব মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণজাগরণ। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই মানে কোনো দলের পক্ষে নয়—এটা ন্যায়, ভোটাধিকার আর মর্যাদার পক্ষে দাঁড়ানো। ইতিহাস আবারও রায় দেবে, আর সেই রায় আসবে রাজপথের মানুষের কণ্ঠে।
এমআইএকে/এআর

