পাসপোর্টের কাজ শেষ করতেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল মেয়ের। বাবা জাকির হোসেন সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডি থানার ওসির ফোনে সব অপেক্ষা থেমে যায়। জানানো হয়, তার মেয়ে আর নেই। জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে উদ্ধার হয়েছে তার নিথর দেহ।
নিহত তরুণীর নাম জান্নাত আরা রুমী। বয়স ৩০। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ধানমন্ডি থানার যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায়। খবর পেয়ে মেয়ের মরদেহ নিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন শোকাতুর বাবা।
বিজ্ঞাপন
শেষবার বাবার সঙ্গে রুমীর কথা হয়েছিল গত ১৩ ডিসেম্বর। ফোনের ওপাশে মেয়ের কণ্ঠে ছিল চাপা অস্থিরতা। বাবাকে জানিয়েছিলেন, তিনি টেনশনে আছেন। কী নিয়ে দুশ্চিন্তা, তা আর বলা হয়নি। সেই কথাই এখন বাবার মনে বারবার ফিরে আসছে।
বাবা জানান, পাসপোর্ট করতে রুমীর বাড়ি আসার কথা ছিল। ফোনালাপে মেয়েটি বাসায় রাখা একটি ব্যাংক চেকের কথাও বলেছিল। সেটি খুঁজে রাখতে বাবাকে অনুরোধ করেন। স্বাভাবিক কিছু কথাবার্তা—যার ভেতরে লুকিয়ে ছিল অজানা এক ভার।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেলে রুমীর কক্ষের দরজায় দীর্ঘক্ষণ সাড়া পাওয়া যায়নি। ভেতর থেকে দরজায় ছিটকিনি লাগানো ছিল। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে কক্ষের ভেতরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, রুমী ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেছেন। সর্বশেষ কর্মস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রুমী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং জিগাতলার ওই ছাত্রী হোস্টেলের একটি কক্ষে একাই থাকতেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সব প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। বাবার কানে শুধু ভাসে মেয়ের শেষ কথা—টেনশনে আছি। সেই টেনশনের কারণ কী ছিল, তার জবাব খুঁজছে পরিবার।

