দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তবে ‘নো ইলেকশনের চেয়ে খারাপ নির্বাচনও ভালো’-এই যুক্তিতে দলটির ভোটে যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শামীম হায়দার।
বিজ্ঞাপন
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। মব তীব্রভাবে দেশকে আকড়ে ধরেছে। মব সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছে, মব ডিসি অফিসে ঢুকে পড়েছে। সেই প্রশাসন কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। তারপরও আমরা ভোটে যেতে আগ্রহী, কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘এ ব্যাড ইলেকশন বেটার দ্যান নো ইলেকশন’। কিন্তু সামনের দিনে আমরা প্রতিনিয়ত গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব। নিরাপত্তাহীনতা দেখলে আমরা আমাদের প্রার্থীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’
বিজয় দিবসের কথা বলতে গিয়ে শামীম হায়দার বলেন, ‘এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সারেন্ডার করেছিল। এটি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। যে বৈষম্য, যে হীন মানসিকতা, যার প্রতিবাদে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, এত বছর পরেও আমরা সেই বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারিনি। সেই সমতার সমাজ গড়তে পারিনি, সেই গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারিনি।
‘বর্তমান সরকারকে আমরা মনে করেছিলাম তারা সমতার বাংলাদেশ গড়বে, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়বে। আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে দেখেছি, ঐক্যের জায়গায় অনৈক্যকে আনা হয়েছে, মবতন্ত্রের উত্থান ঘটেছে, হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে, রক্তের রাজনীতি শুরু হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রার্থী, একজন গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ওসমান হাদিকে হত্যার জন্য অত্যন্ত নির্মমভাবে গুলি করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থার চিড় উদীয়মান হচ্ছে, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থার যে ভঙ্গুর অবস্থা, সেটি উদীয়মান হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে সরকার আসলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি না।’
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই, আমরা একটা সমতার নির্বাচন চাই, আমরা একটা রাষ্ট্র কাঠামো দেখতে চাই, সরকার কাঠামো দেখতে চাই। কিন্তু আমরা দেখছি, সরকার দুর্বল হচ্ছে, মব শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা দেখছি সরকার দুর্বল হচ্ছে, অপশক্তি শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের এখন সকলকে মিলে ঐক্যমত সৃষ্টি করে একটা ঐক্যমতের নির্বাচন, একটা সমঝোতা করতে হবে—রাজনৈতিক সমঝোতা, সকলকে নিয়ে। তার মাধ্যমে দেশ গঠন করতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
শামীম হায়দার বলেন, ‘আজকে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন, যেদিনে সারা পৃথিবীতে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলাম। সেই দিনে সকলের শপথ হওয়া উচিত—সামনের বাংলাদেশ হবে একাত্তরের বাংলাদেশ। সামনের বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীনতার বাংলাদেশ। সামনের বাংলাদেশ হবে ঐক্যের বাংলাদেশ। সামনের বাংলাদেশ হবে সার্বভৌমত্বের বাংলাদেশ। সামনের বাংলাদেশ হবে সমঝোতার বাংলাদেশ। সেটি আমাদের সকলকে, সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে একত্রিত হয়ে সেই সমঝোতা করতে হবে—দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে। আমরা মনে করি, সেখান থেকে আমরা যোজন যোজন বিচ্যুতি ঘটে গেছে।
‘কোন একজন ব্যক্তিকে, কোন একটি দলকে ঐক্যের আহ্বান দিতে হবে, জানাতে হবে। জাতীয় পার্টি সেই ঐক্যের ডাক দিচ্ছে। একাত্তরের সমস্ত শক্তিকে আমরা বলব—জাতীয় পার্টির আন্ডারে আসেন। আমরা একতাবদ্ধ হয়ে সকলকে নিয়ে একাত্তরের চেতনায় দেশ গড়ব।’
একাত্তরকে ছাড়া কোনো রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, চব্বিশে একটি অসম্ভব আন্দোলন হয়েছে, অনেক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। তবে একাত্তর একাত্তরের জায়গায় মহিমান্বিত, চব্বিশ চব্বিশের জায়গায় মহিমান্বিত। একাত্তরকে ছাড়া কোনো রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না।
‘যারা একাত্তরকে বিশ্বাস করবে না, তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে না। যারা একাত্তরকে বিকৃত করছে, তারা বাংলাদেশকে বিকৃতি করছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু। একাত্তরকে নিয়ে যে ‘ডিস্টরশন অব হিস্ট্রি’ হচ্ছে, ‘স্যাফ্রোনাইজেশন অব হিস্ট্রি’ হচ্ছে—আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একাত্তর একাত্তরের জায়গায় আছে, কেউ এটিকে নষ্ট করতে চাইলেও নষ্ট করতে পারবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরে এক প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছে এবং এখনো প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়েনি। এর মাধ্যমে আমরা প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত। আমরা আমাদের পোলিং এজেন্ট, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত; প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। দেড় বছর একটা সরকার থেকে এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার দায় এই সরকারকে ইতিহাসে নিতে হবে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমরা দেখতে পারি যে আমাদের প্রার্থীর নিরাপত্তা নাই, তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হব। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে যে এই নিরাপত্তা বর্তমানে দেশে আছে। এটি তাদের দায়িত্ব। ঠিক এই কাজের জন্যই তারা শপথ নিয়েছেন। তারা যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন বা আন্তরিক না হন, তাহলে তাদের শপথ ভঙ্গ হয়েছে।
প্রতিনিধি/এমআর

