একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ‘পরিকল্পিত নীল নকশার ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিত হবে একটা নীল নকশার মাধ্যমে একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত করা হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজস করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন? আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বারবার এই চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র হয়েছে, বারবার এ দেশের মানুষের উপরে আঘাত এসেছে এবং দেশের মানুষ যেন মেধার ভিত্তিতে জেগে উঠতে না পারে, যেন তারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উপরে উঠতে না পারে, শিক্ষায় দীক্ষায় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে না পারে, সেই চেষ্টা তখন করা হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে বিগত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে একই ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন আঙ্গিকে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে ফেলা হয়েছে। সবসময় এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এই জাতির বিরুদ্ধে আমরা দেখছি।
‘ওরা ভয় পাইয়ে দিতে চায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল যখন ঘোষণা হলো, তখনই হত্যাচেষ্টা করা হলো হাদিকে। তিনি একজন সৈনিক, যে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভয় আবার শুরু করতে চেয়েছে, যে ভয় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে। ভয় দেখিয়ে শাসন করার চেষ্টা করেছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আবার সেই ভয় দেখিয়ে গণতন্ত্রের সৈনিকদের স্তব্ধ করে দিতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বলে যে, বিএনপি কখনো ভয়ে দমে যায় না। আমরা দমে যাবো না। আমরা তারেক রহমান সাহেবের যে স্বপ্ন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার যে স্বপ্ন, সত্যিকার অর্থেই একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবার সেই স্বপ্নকে আমরা অবশ্যই বাস্তবায়িত করব. ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুধু আহ্বান জানাতে চাই, চতুর্দিকে ষড়যন্ত্র হবে, চক্রান্ত হবে। তার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে বিএনপি। সে জয় লাভ করবেই ইনআশাল্লাহ, সে বিশ্বাস আমাদের আছে। বিএনপি একটা লিবার ডেমোক্রেটিক পার্টি, একটা উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আশাবাদী এই কারণে যে, আজকে যতই চক্রান্ত হোক ষড়যন্ত্র হোক, সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্রকে ভেঙে নস্যাৎ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস এই বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে বিএনপি।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা ১৫-১৬ বছর লড়াই করেছি, আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ইলিয়াস আলীসহ ১৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমাদেরকে কিন্তু পরাজিত করতে পারেনি, দাবিয়ে রাখতে পারেনি। সেই জন্যই আজকে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গত দুই দিন যে ঘটনাটি ঘটল, একজনকে গুলি করার, এ ধরনের কাজ যারা করে, একটি চিহ্নিত দল। এই ধরনের অপকর্ম যারা করে, তারা চিহ্নিত দল। এই দলটি বাংলাদেশকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবে না। তবে বিএনপি সকল হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করবে। আপনারা ভাববেন না আমরা নীরব আছি, নীরব থাকব। তার অর্থ এই না, আঘাত এলে আমরা আপনাদেরকে সালাম দিয়ে চলে যাব। এই কথা ভাবার সুযোগ নেই।’
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুব দলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
বিইউ/এএইচ

