শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩

বিএনপিতে জটিল সমীকরণ, একক প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের চ্যালেঞ্জ

মো. ফারুক হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

বিএনপিতে জটিল সমীকরণ, একক প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের চ্যালেঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) সংসদীয় আসনে জামায়াত-বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে জটিলতা থাকলেও জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ আসনে বিএনপির অন্তত ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই নানাভাবে মাঠে আছেন। এতে দলগতভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে, জামায়াতের একক প্রার্থী গণসংযোগে ব্যস্ত। এ আসনে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় জেলার রাজনীতি মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। নিজ দলের বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। 


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে, জুলাই বিপ্লবের কারিগরদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এ আসনে তাদের কোনো প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই।

thumbnail_মো._হারুনুর_রশীদ===4

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ।

 

স্থানীয় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। একাধিক গ্রুপে বিভক্ত বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী তৎপর। মনোনয়ন লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এই আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ এবং তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য। বিএনপির এই বিশৃঙ্খলার বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী অনেক বেশি সু-সংগঠিত।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি ও জামায়াত দু’দলই এ আসনের গুরুত্বপূর্ণ ‘খেলোয়াড়’। যে দল সবচেয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে নিজেদের ঐক্য ধরে রাখতে পারবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি তরুণ ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে পারবে, জয় তাদের পক্ষেই যাবে। অনেক আগেই জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে জোরকদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জামায়াতের প্রার্থীর শক্তিশালী উপস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনি লড়াই সম্ভবত জেলার সবচেয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ আসনে রূপ নিয়েছে। যদিও এ আসনটির ভোটের মাঠে বরাবরই জনপ্রিয় ধানের শীষ।

thumbnail_মো.নূরুল_ইসলাম_বুলবুল===03
জামায়াতের প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।

১৯৯১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৮টি সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, এ আসনে বিএনপি সর্বোচ্চ চারবার নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ তিনবার, জামায়াতে ইসলামী একবার জয় পেয়েছে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নে অনেকটাই এগিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ। এই আসনে ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করেন তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা হারুনুর রশিদ। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কোনো নির্বাচনে হারুনকে নিরাশ করেনি ভোটাররা। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন হারুন। সংসদে গিয়ে আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা কারে দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পান হারুনুর রশিদ। এ আসনে জামায়াত আগে থেকেই শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি-জামায়াত দুই দলেরই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

আরও পড়ুন

বিএনপির দুই হেভিওয়েট, একক প্রার্থী নিয়ে নির্ভার জামায়াত

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থীও হেভিওয়েট। তিনি ঢাকা দক্ষিণ মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল ও সুশৃঙ্খল সংগঠন ভোটের মাঠে তাদের এগিয়ে রাখবে। সব মিলিয়ে এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।

মো._রফিকুল_ইসলাম
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ।

বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে বিএনপির রাজনীতি এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত। একদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ। অন্যদিকে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজের আলাদা আলাদা বলয় রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলে হারুনপন্থিরা সবাই বাদ পড়েন। বিএনপিতে হারুন বিরোধীদের কমিটিতে পদ-পদবি দেওয়া হয়। সেই থেকে হারুন ঘনিষ্ঠ অনুসারী নেতাকর্মীদের অনেকটাই কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। বিএনপির নতুন নেতৃত্বে হারুনবিরোধী একটি বলয় তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপিংয়ের কারণে তৃণমূল কর্মীরা বিভক্ত ও হতাশ। সব মিলিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির বিজয় নির্ভর করছে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের ওপর।এই আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ দীর্ঘদিন একক প্রার্থী। চার বারের সংসদ সদস্য, এলাকায় জনপ্রিয়তা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে হারুনুর রশিদের মনোনয়ন নিশ্চিত বলছেন তার অনুসারীরা।

thumbnail_1000246363

তবে হারুন বিরোধী বলয়ের নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে হারুনুর রশিদ। কিন্তু দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের হতাশ করে দলের প্রত্যাখান করা অবৈধ সংসদে যান। তখন থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হারুনের বিরুদ্ধে আস্থার সংকট তৈরি হয়। একই কারণে হারুন বিরোধীদের হাতে দলের দ্বায়িত্ব দেয় বিএনপি। ফলে আগামী নির্বাচনেও জেলা বিএনপির নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে, এ আসনে মনোনয়নের জন্য আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ। গোলাম জাকারিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দীর্ঘ বিরতির পর দলের দুঃসময়ে আবারও দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গোলাম জাকারিয়া ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চাইনিজকে। দলের দ্বায়িত্ব নিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তারা সক্রিয় ছিলেন। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে।

thumbnail_1000246365

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, সম্প্রতি তিনি পদ্মা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। পরে তার পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার জন্ম নিয়েছে। দেশের জনগণ ৫৪ বছর অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছে। কিন্তু এবার জামায়াতকে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন দেখতে চায়।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী গোলাম জাকারিয়া বলেন, তিনি জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়ে থেকে দলকে সুসংহত করেছেন এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ধনের শীষ প্রতীককে প্রত্যন্ত গ্রামে পরিচিত করেছেন। দলের দুর্দিনে তিনি আবারও হাল ধরে রেখেছেন। এ কারণে মনোনয়ন চাইলে দল আমাকে নিরাশ করবে না। এছাড়া বেশির ভাগ নেতাকর্মীই আমার পক্ষে আছেন। সাধারণ মানুষেরও প্রত্যাশা যেন আমি নির্বাচন করি। দলমত নির্বিশেষে সবার সমর্থন আছে। তাই দলের প্রার্থী হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।

আরও পড়ুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২: এক ডজন প্রার্থী বিএনপিতে, প্রচারণা-গণসংযোগে জামায়াত

মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, দলের প্রতি আমার ত্যাগ রয়েছে, কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়ে পালন করে যাচ্ছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। অবদান বিবেচনায় দল নিশ্চয়ই আমাকে অগ্রাধিকার দেবে।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, আমি জনগণের ভোটে বারবার নির্বাচিত এমপি। যতবার নির্বাচন করেছি এখানকার ভোটাররা আমাদেরকে নিরাশ করেননি। বিপুল ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সেবা করছি। ছাত্র রাজনীতি থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ পরীক্ষা দিয়ে এখানে এসেছি। আশা করি, দল আমার জনপ্রিয়তা ও দলে অবদান বিবেচনায় আবারও ধানের শীষের মনোনয়ন দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর