ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে ‘রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে এত বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে, দেশটাকে আবার সুন্দর করবার গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা যখন চারদিকে দেখছি যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, অনেককে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে দেখছি, যে একটা অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।’
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা পড়ে শুনিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ তোমাকে ডাকছে। আজকে তোমরা যারা এখন যৌবনে পা দিচ্ছো, নতুন পৃথিবীতে পা দিচ্ছো, সেই পৃথিবী তোমাদের ডাকছে। যে কথাটা ডক্টর সবুর খান বলেছেন যে, নিজেকে তৈরি করতে হবে, পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে। পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে, তুমি টিকতে না পারলে নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে। তারপরে তোমাকে তৈরি হতে হবে।’
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’ নামক মাসিক ম্যাগাজিনের উদ্যোগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনায় এই অনুষ্ঠান হয়। পরে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
বিজ্ঞাপন
‘শিক্ষার বর্তমান অবস্থার জন্য রাজনীতিবিদ-আমলারাই দায়ী’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেইরকম তো নেই, বরঞ্চ অত্যন্ত নিম্নমানের। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই, এর জন্য দায়ী আমরাই, এর জন্য দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র। এখানে শিক্ষার ওপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বিএ পাস করি, এমএ পাস করি, চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা আমার ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে… সে ঘুরে বেড়ায়, কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না। কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করত অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতে পারত ইলেকট্রিসিটির ওপরে অথবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপরে অথবা অন্যান্য বিষয়ের ওপরে, তাহলে কিন্তু তার চাকরি কেউ আটকাতে পারত না। এই যে নীতির ব্যাপারটা এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।’

‘শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের স্যাররা আন্দোলন করছেন, রাস্তায় আছেন শিক্ষকদের বেতনের জন্য। এটা তো অনেক ভালো হতে পারত যদি আমরা পুরোপুরি এটাকে পরিবর্তন করে শুধু অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা এবং আমাদের সাধারণ বেশির ভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য যদি ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারতাম। তাহলে আমরা সবচেয়ে ভালো লাভবান হতে পারতাম। আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নাই, তার কোনো ইনস্টিটিউট নাই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নাই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএফ তৈরি করছি। তাহলে এই তরুণরা বিকশিত হবে কীভাবে?’
মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপরে জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে, ট্রানজিশনাল পিরিয়ড…খুব অস্থিরতা আছে, এই অস্থিরতাকে এই যে এখানে তো সব জেন জি…তাই তো নাকি… ভুল বলছি। ওদের (জেন জি) চিন্তা, ওদের ভাবনা এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। কারণ বয়স… প্রজন্মের যে পার্থক্য এটা অস্বীকার করার তো উপায় নেই।’
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মুন্সিগঞ্জ বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন পুস্তিসহ কৃতি শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।
বিইউ/জেবি

