রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জামায়াতে যোগ দিয়ে ফের আলোচনায় ডিসি সোলায়মান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

AFM Solaiman chowdhury
এএফএম সোলায়মান চৌধুরী

জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন ফেনীর এক সময়ের আলোচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সাবেক এই সচিব আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য পদের ফর্ম পূরণ করে দলে যোগ দেন।
 
ফেনী এক সময় ছিল সন্ত্রাসকবলিত জনপদ। দুর্দান্ত প্রতাপশালী ফেনীর সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারীর কর্মকাণ্ড সারাদেশে সমালোচিত ছিল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট রাতে জয়নাল হাজারীর বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তিনি তখন পালিয়ে আত্মগোপনে ভারতে চলে যান। ২০০৪ সালে হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

solaiman_chowdhury_and_joynal_hazari
জয়নাল হাজারী (বাঁয়ে) ও সোলায়মান চৌধুরী। ফাইল ছবি

 

ফেনীর মাস্টার পাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনে যে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয় তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। তখন তিনি ফেনীর জেলা প্রশাসক (ডিসি)। সোলায়মান চৌধুরীর কারণেই শেষ হয়ে যায় ফেনীর বহুল আলোচিত জয়নাল আবেদীন হাজারীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। 

পুরো ফেনী শহরে বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে দিয়ে রীতিমতো কমান্ডো স্টাইলে জয়নাল হাজারীর বাড়িতে অভিযানের পুরো পরিকল্পনার অন্যতম ‘মাস্টার মাইন্ড’ ছিলেন সোলায়মান চৌধুরী। ওই অভিযানের সময় জয়নাল হাজারী ভাগ্যগুণে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষিদের সহযোগিতায় ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে অবস্থান নেন। 

ফলে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়নাল হাজারী অংশ নিতে পারেননি। ওই ঘটনার পর তার যেসব রাজনৈতিক সহকর্মী, সহযোদ্ধা ফেনীতে ছিলেন তাদেরকেও প্রশাসন কোণঠাসা করে ফেলে। পরে জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা আসে। জয়নাল হাজারীর স্বাভাবিক রাজনৈতিক জীবনে ফেরার পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।  


বিজ্ঞাপন


Solaiman_chowdhury
সোলায়মান চৌধুরী। ফাইল ছবি 

 

ফেনীতে জয়নাল হাজারী বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার পর পরই সোলায়মান চৌধুরী নিজেকে আওয়ামীবিরোধী হিসেবেও উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের কাছেই যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় সেক্টর করপোরেশন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। পরে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যানও করা হয় তাকে। অবিভক্ত ঢাকার সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, অতঃপর পাট ও বস্ত্র সচিব, তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সচিব করা হয়। 
 
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে জয়নাল হাজারী ভারত থেকে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে সব মামলা থেকে একে একে অব্যাহতি পান তিনি। দেড় দশক পর ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পদ পান তিনি। ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর মারা যান জয়নাল হাজারী। 
 
সন্ত্রাসকবলিত জনপদ ফেনীর অবস্থা কীভাবে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন একজন অকুতোভয় সরকারি কর্মকর্তা, আর সমাজে বইয়ে দেন সুবাতাস তারই বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে ‘ফেনীতে ৩২১ দিন’ শিরোনামে বই লেখেন সোলায়মান চৌধুরী।  

496152962_1274206891379547_1425215875732165405_n
ফেনীর অভিজ্ঞতা নিয়ে সোলায়মান চৌধুরীর লেখা বইয়ের প্রকাশনা উৎসব। ফাইল ছবি

সোলায়মান চৌধুরীর পরিচিতি: এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সচিব হিসেবে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দেশের সেবা করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ফেনুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম আব্দুল জাব্বার ও মাতা মরহুমা শাহার বানু।

১৯৭৯ সালে সহকারী কমিশনার পদে সরকারি চাকরিতে যোগদান। এরপর সরকারের বিভিন্ন দফতরে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন। চাকরিকালে তিনি ইউ এস টি সি থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশে পাটকল কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ফেনী ও কুড়িগ্রামের ডিসি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব ছিলেন। সবশেষে জনতা ব্যাংক লিমিটেড-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে আই আই ইউ সি-তে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।

২০১৯ সালে 'জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ' নামের রাজনৈতিক প্লাটফরম-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ২০২০ সালে নব গঠিত রাজনৈতিক দিল 'এবি পার্টি'র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব, মঙ্গাকবলিত কুড়িগ্রাম জেলাকে খাদ্যে ঘাটতি থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত করেন। সততা ও আদর্শে অবিচল থেকে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তিনি বেশি আলোচিত হন। ফেনীর ডিসি হিসেবে তিনি অসাধ্য সাধন করে আলোচিত হন। তিনি মায়ানমার, সিংগাপুর, চীন, ইরান, সিরিয়া, সুদান, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তিনি ৩ পুত্র ও ৪ কন্যার পিতা।

ক.ম/ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর