রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডাকসু ষড়যন্ত্র অনুমান করেছি, মোকাবেলা করতে পারিনি: এমরান সালেহ প্রিন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

ডাকসু ষড়যন্ত্র অনুমান করেছি, মোকাবেলা করতে পারিনি: এমরান সালেহ প্রিন্স

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, গভীর ষড়যন্ত্রের ফল ডাকসু নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র আমরা অনুমান করতে পারছিলাম, তবে নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবেলা করতে পারি নাই। তিনি বলেন, ১৭ বছর রাষ্ট্রীয় আওয়ামী ফ্যসিবাদ ও ছাত্রলীগের নির্মম দমন নির্যাতনে ছাত্রদল ক্যাম্পাসের বাইরে, কিন্তু শিবির ছাত্রলীগের শরীরে বিলীন হয়ে হাসিনা, তার বাবা ও নৌকার নামে স্লোগান দিতে দিতে অস্থির ছিলো। তারা আবার ৫ আগস্টের পর শিবির নামে আবির্ভূত হয়েছে। 

আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে  ময়মনসিংহে উত্তর জেলা মহিলা দলের উদ্যোগে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন প্রিন্স। 


বিজ্ঞাপন


এর আগে ময়মনসিংহ নগরীর হরি কিশোর রোডে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় সংগীতের সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ্ ওয়ারেস আলী মামুন। পরে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে মহিলা দলের নেতাকর্মীসহ বিএনপি নেতারা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মিলিত হন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজীন চৌধুরী লিলি। সঞ্চালক ছিলেন সাধারণ সম্পাদিকা হোসনে আরা নিলু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, গৌরিপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ আজিজুল হক, জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ সভানেত্রী রেহানা পারভীন ববি প্রমুখ। 

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ডাকসু নির্বাচনে স্বৈরাচার ও রাজাকার একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গণ শত্রু ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তারা জানেনা, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সন্তানদের হত্যাকারীদের আর কখনোও গ্রহণ ও ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ ও জামায়তের সক্ষতা দীর্ঘ দিনের। তারা একে অপরের মাসতুতো ভাই। এরশাদের স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতেও বাংলাদেশের স্বৈরাচারের জন্মদাতা আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা বিরোধী জমায়াত একসাথে নির্বাচন করেছিল। তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভে জমায়াত বিপদের দিনে তাদের পাশে থেকে সুরক্ষা দেয়া বিএনপির হাত ছেড়ে তাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যাকারী আওয়ামী লীগের রক্তমাখা হাত ধরতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। 

গতকাল মঙ্গলবারের ডাকসু নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই নির্বাচনে প্রায় ৮০ ভাগ ভোট কাস্ট হওয়া মনে বিগত ১৬ বছরে দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভোটও কাস্ট হয়েছে। এই ভোট গেলো কার পকেটে- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতস্ফূর্ত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে বিগত ১৬ বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটিসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের শরীরে গুপ্তভাবে বিলীন হয়ে থাকা শিবিরের বিজয়ের নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে আসবে। ছাত্রলীগের গুপ্ত ভোট ও জমায়াতকানা প্রশাসনের ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে শিবিরকে জেতানো হয়েছে। ষড়যন্ত্র ও ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শুধু সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের ভোটে জমায়াত - শিবিরের বিজয় বিশ্বাসযোগ্য নয় । 


বিজ্ঞাপন


এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দিল্লীতে বসে তাদের আমলে অবৈধ সুবিধাভোগী শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে খুনী হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছে আগামী নির্বাচন ঠেকাতে ও নিজেরা ফিরে আসতে। সেই টাকার উত্তাপ সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। তারা জনগণ ও বহিবিশ্বকে দেখাতে চাইছে, “বাংলাদেশে তাদের অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ও জয়জয়কার। এদের ঠেকাতে হাসিনার বিকল্প নাই”। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বা দুর্বলতা বা গণ অভ্যুত্থানের একক দাবীদারদের ছত্রছায়ায় বা বিলম্বীত নির্বাচন - যাই হোক, দেশের প্রগতি বিরোধী জামায়াতসহ দক্ষিণপন্থীদের উত্থান তো কিছুটা হয়েছেই।

তারা সরকারের প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি বলেন, মুক্ত বুদ্ধি ও চিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানের সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। অথচ, এবার ডাকসু নির্বাচন করা হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে নির্বাচনের মতো। যে কারণে ঢাকা ইউনিভার্সিটির জমায়াত নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত ভিসিসহ ইউনিবার্সিটি প্রশাসন নিরপেক্ষ আচড়ন দূরে থাক, ডাকসু নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফলাফল শিবিরের পক্ষে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। জমায়াত -শিবির প্রভাবিত ভিসিসহ প্রশাসনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা জেনেও নির্বাচনে যাওয়া ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঠিক ছিলো কী না, সেটাও প্রশ্নের দাবী রাখে।
 
বিএনপির এই নেতা বলেন, জমায়াতকানা প্রশাসন, ছাত্র লীগের গুপ্ত ভোট, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো রেখে নির্বাচন করা ছাত্র শিবিরকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। নিজেরও আত্ম সমালোচনা করতে হবে ছাত্র দলকে। কেনো ষড়যন্ত্র ধরতে পারা গেলো না, সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের সেন্টিমেন্ট কী অমরা অনুধাবন করতে পেরেছি? তিনি সকলকে আত্ম উপলব্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে অশুভ শক্তির যড়যন্ত্র মকাবেলায় কৌশল ও করনীয় নির্ধারণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
 
এমরান সালেহ প্রিন্স মহিলা দলের নেতাকর্মীদের প্রতি ঘরে ঘরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম পৌঁছে দিয়ে ধানের শিষের প্রচারণা শুরু করার ও জামায়তের মহিলা কর্মীদের বিএনপির বিরুদ্ধে অপ প্রচার রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

এমআর/ক.ম/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর