রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নুরাল পাগলা ইস্যুর নেপথ্যেও আওয়ামী লীগ!

কাজী তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

nurul
এই ঘটনার নেপথ্যে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ইমাম মাহাদী দাবিদার নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, লুটপাট ও লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার পেছনে কারা উসকানি দিয়েছে এনিয়ে জোর তদন্ত চলছে।

সেদিন কারা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে, লাশ পুড়িয়ে উল্লাসের পেছনে কারা উসকানি দিয়েছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


বিজ্ঞাপন


প্রাথমিক তদন্তে উসকানি ও হামলার পেছনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এর আগে গত শুক্রবার রাতে এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে সাড়ে তিন হাজার জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত নুরাল পাগলা কিংবা তার নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

আরও পড়ুন

রাজবাড়ীর ঘটনায় নতুন করে প্রশ্নের মুখে সরকারের ভূমিকা

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন, গোয়ালন্দের নতুন পাড়া (মাল্লাপট্টি) এলাকার শওকত সরদারের ছেলে মো. জীবন সরদার (২২), মাল্লাপট্টী শাকের ফকির পাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম শুভ (১৭), ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার ডিগ্রীরচর বারখাদা গ্রামের নিজাম উদ্দিন সরদারের ছেলে মোহাম্মদ ফেরদৌস সরদার (৩৬) ও গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আদর্শ গ্রামের ছালামের ছেলে বিল্লু।


বিজ্ঞাপন


Nural
বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর আকিদা পোষণ করতেন নুরাল পাগলা। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে এই মামলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেওয়ান পাড়া গ্রামের আফজাল সরদারের ছেলে শাফিন সরদার (১৮), উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ১নং দিরাস্তুল্লাহ মৃধা পাড়ার মৃত আক্কাস মৃধার ছেলে উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ মৃধা, উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের লাল মিয়া মৃধার ছেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা, দেওয়ান পাড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক জনি (৩২) ও গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া গ্রামের কাজি আরিফের ছেলে কাজী অপু (২৫), গোয়ালন্দ উপজেলার দিরাজতুল্লাহ মৃধা ডাঙ্গী গ্রামের মৃত মকলেছুর রহমান মৃধার ছেলে মো. হায়াত আলী মৃধাকে (২৯) গ্রেফতার করে পুলিশ।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম জানান, সেদিনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্য দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত ছিল। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

নুরাল পাগলের দরবারে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরে মামলা, আসামি ৩৫০০

গোয়ালন্দ উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. জালাল উদ্দীন বলেন, আমরা গোয়ালন্দবাসী খুবই শান্তিপ্রিয় এবং ধার্মিক। শুক্রবার বাদ জুমা আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ঘোষণা করি। আমাদের কোনো বিক্ষোভ মিছিল বা নুরাল পাগলার বাড়ি ঘেরাও বা হামলা এ জাতীয় সহিংস কর্মসূচি ছিল না। কিন্তু একটি পক্ষ পূর্বপরিকল্পিতভাবে শান্তি সমাবেশে ঢুকে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এটা দেখতে পেয়ে আমরা দ্রুত কর্মসূচি শেষ করে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করি। পরবর্তী সময়ে হামলাকারীরা যে জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছে তা শুধু ন্যাক্কারজনকই নয় তারা আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলামকেই কলুষিত করেছে। আমি লাশ পোড়ানোসহ সব অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।

RRR
ঘটনাটি দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের আমির মো. নুরুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেন, সর্বদলীয় ও সর্বমহলের ঈমান-আকিদাহ সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ হতে গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, শুক্রবার বাদ জুমা গোয়ালন্দ উপজেলায় কোনো মিছিল হবে না। গোয়ালন্দ উপজেলায় শুধু সমাবেশ হবে। জেলা ঈমান আকিদাহ কমিটির সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস আলী মোল্লা গোয়ালন্দ উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। শুক্রবার দুপুরে আমি নিজে ঘটনাস্থল গোয়ালন্দ নুরাল পাগলের বাসা পরিদর্শন করি এবং সেখানে মাটি সমতলে তারা লাশ নেওয়ার কার্যক্রম দেখতে পাই।

আরও পড়ুন

দরবারে হামলায় নিহত রাসেল ছিলেন নুরাল পাগলের ভক্ত

জেলা জামায়াত আমির বলেন, তখন উপস্থিত সাংবাদিকরা আমাকে লাশ নামানো নিয়ে প্রশ্ন করলে আমি তাদেরকে প্রশ্নের উত্তরে জানাই, গোয়ালন্দ উপজেলায় লাশ নামিয়ে সমতলে আনাতে গোয়ালন্দ উপজেলায় শুধু সমাবেশ হবে, মিছিল হবে না। ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির দুই গ্রুপের সঙ্গে আমি গোয়ালন্দ উপজেলা ঈমান আকিদাহ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা জালাল এবং অন্যান্য সদস্যর মধ্যে অধ্যক্ষ কে এ মুইত হিরা, কাশেম মন্ডলকে মিছিল না করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাই। তারা আমাকে আশ্বস্ত করে, তারা সেখানে আলোচনা করে ঠিক করে পরবর্তী সময়ে আমাকে জানাবে। কিন্তু সেখানে মিছিল হবে সেটা আমার জানা ছিল না। আমার সব বক্তব্য এবং লাইভ আকারে আছে। আমি যা বলেছি মিডিয়ার সামনে বলেছি।

TTT
নুরাল পাগলা ও তার অনুসারীদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ছিলেন এলাকাবাসী। ছবি: সংগৃহীত

জামায়াত নেতা বলেন, এ ঘটনায় আমি দুঃখিত। এ ঘটনা ন্যক্কারজনক। লাশ মাটি থেকে তুলে পোড়ানো আমার জীবনে আমি শুনিও নাই দেখিও নাই। এই ঘটনাকে আমি ধিক্কার জানাই। মৃত মানুষকে পোড়ানো বা বাড়িঘর লুট করা এটা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিক। নুরাল পাগলের এই ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়ানো এবং প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের কিছু সময় পরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সম্প্রতি মারা যাওয়া নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা নামে এক ব্যক্তির দরবারে হামলা চালায় একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা শরিয়ত পরিপন্থি পদ্ধতিতে দাফন করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা নুরাল পাগলের দরবার শরিফে লুটপাট করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এছাড়া নুরাল পাগলের ভক্ত রাসেল মোল্লা নামের এক যুবক নিহত হন।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর