রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নুরের ওপর হামলা: অস্থির রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

নুরের ওপর হামলা: অস্থির রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ
নুরের ওপর হামলা: অস্থির রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের অভিযোগ, বিশ্লেষণ ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। অনেকেই মনে করছেন, এটি শুধু একটি সংঘর্ষ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং গভীর নীলনকশা।

ঘটনার শুরু হয় নুরের নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, মিছিলটি জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আগে থেকেই হুমকি দেওয়া হয় তাকে। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নুরকে ফোন করে সতর্ক করেন, সেই এলাকায় গেলে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে। হুমকি সত্ত্বেও মিছিল হয় এবং এরপরই সংঘর্ষ শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে।


বিজ্ঞাপন


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলকারীরা একটি ভবনের সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে। তাদের হাতে কোনো ধরনের হামলার উপকরণ ছিল না। এরপর হঠাৎ করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুই দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং বেপরোয়া লাঠিপেটা শুরু করে। এতে নুরুল হক নুরসহ একাধিক কর্মী আহত হন। অনেকেই বলছেন, যদি কেবল ভিড় ছত্রভঙ্গ করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে টিয়ারশেল বা নিয়ন্ত্রিত লাঠিচার্জ যথেষ্ট ছিল। কিন্তু নুরকে লক্ষ্য করে এভাবে হামলা চালানো ঘটনাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এ ঘটনায় নানা ধরনের তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা উঠে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দাবি করছেন, এটি সরকারের মদদপুষ্ট পরিকল্পিত হামলা। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অংশ সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, হামলার মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যার লক্ষ্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তোলা।

আরও পড়ুন

নুরের অবস্থার উন্নতি, আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর

এই ঘটনার পরদিন রাতেই বিজয়নগর এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের মশাল মিছিল হয়। সেখানেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও রাতের মিছিল নতুন করে রাজনৈতিক পরিবেশকে উসকে দেয়। ফলে রাজধানীর রাজনীতিতে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।


বিজ্ঞাপন


বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা নিছক একটি সংঘর্ষ নয়, বরং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠে এক ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। নুরুল হক নুর, যিনি এক সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ও ডাকসুর ভিপি ছিলেন, তার ওপর প্রকাশ্যে হামলা দেশের তরুণ রাজনীতিবিদদের জন্য একটি অশনি সংকেত বলেও অনেকে মত দিচ্ছেন।

এছাড়া বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক যোগসূত্র। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং সেখানে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গুঞ্জন রয়েছে, সেই বৈঠকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয় এবং আরও দুই হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই অর্থের একটি অংশ দিয়ে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য বলছে, প্রবাসে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, প্রভাবশালী আমলা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কৌশলগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের ভেতরে দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নাশকতার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এর মূল লক্ষ্য হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাত তৈরি করা এবং বিরোধী রাজনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

নুরুল হক নুরের ওপর হামলা এখন কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে না কেউ। বরং এটি দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের হামলা ও সহিংসতা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন শঙ্কা।

দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে আসা নানা তথ্য, অভিযোগ ও গুঞ্জন একসঙ্গে মিলিয়ে এই হামলাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বড় চিত্রের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনাগুলো ভোটারদের মনোজগতে প্রভাব ফেলবে এবং রাজনৈতিক পরিসরকেও অস্থির করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর