রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফজলুর-রুমিনকে ঘিরে বিএনপিতেও ক্ষোভ, সিদ্ধান্তের অপেক্ষা!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ফজলুর-রুমিনকে ঘিরে বিএনপিতেও ক্ষোভ, সিদ্ধান্তের অপেক্ষা!
·      শোকজের চিঠিতে ফজলুকে বিএনপির তিরস্কার
·      জবাব দিতে ৭ দিন সময় চেয়েও পেয়েছেন একদিন
·      ইসির শুনানিতে বেপরোয়া রুমিন ফারহানা, বিব্রত বিএনপি
·      স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে আসতে পারে সিদ্ধান্ত  

 
ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিয়ে পরে হয়ে যান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা । পরবর্তীতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যোগ দিয়ে পান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ। এই দুই দল থেকে জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেন। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্যও হন। দুই দল ঘুরে রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান পরবর্তীতে যোগ দেন বিএনপিতে। কিন্তু বিএনপি থেকে একাধিকবার নির্বাচন করলেও জয়ের মুখ দেখা হয়নি তার।


বিজ্ঞাপন


ফজলুর রহমান দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকলেও দলীয় কার্যক্রমে নেই খুব একটা সক্রিয়তা। তবে প্রতিনিয়ত নানা বিতর্কিত বক্তব্য রেখে আলোচনায় থাকছেন বছরজুড়ে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পতনের পর থেকে অনেকটা লাগামহীন বক্তব্য দিয়ে দলকে ফেলেছেন সমালোচনার মুখে। 

ফজলুর রহমানের হাত থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে খোদ দলের নেতাকর্মী, অন্যান্য রাজনীতিবিদ কেউ বাদ যায়নি। এমনকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নিয়েও তিনি কটাক্ষ করেছেন। সবাইকে কথা দিয়ে ধুয়ে দিয়ে এবার নিজেই পড়েছেন বেকায়দায়। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে জুলাই যোদ্ধারা মাঠে নেমেছেন তার শাস্তির দাবিতে। উঠেছে গ্রেপ্তারের আওয়াজ। এমন পরিস্থিতিতে দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়ে এখনো বিএনপির তরফে তেমন কোনো আভাস মেলেনি। তবে সতর্ক করা কিংবা ভর্ৎসনা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে প্রবীণ রাজনীতিবিদ অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও নানা সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। সবশেষ নির্বাচন কমিশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনের সীমানা নিয়ে শুনানিতে অংশ নিয়ে তার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে এনসিপি ও দলের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিএনপিও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। ফলে তার বিষয়েও বিএনপির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

সোমবার (২৫আগস্ট) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। দেশের বাইরে কয়েকজন চিকিৎসার জন্য থাকায় তারা সেখানে বসেই বৈঠকে ভার্চুয়াললি অংশ নেবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নীতিনির্ধারণী এই বৈঠকে দলের অন্য এজেন্ডার বাইরে ফজলুর রহমান ও রুমিন ফারহানার বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সেখান থেকে এদের বিষয়ে সিদ্ধান্তও আসতে পারে। তবে রোববারের ঘটনায় রুমিন ফারহানাকে শোকজ কিংবা কোনো সতর্ক বার্তা দল থেকে এখনো দেওয়া হয়নি।

এর আগে রোববার (২৪আগস্ট) ফজলুর রহমানকে এক দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শোকজ করে বিএনপি। তবে তিনি জবাব দিতে সাতদিনের সময় চাইলেও তাকে দেয়া হয়নি। আরও একদিন সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্র বলছে, দল তার বিষয়ে নমনীয় থাকলে আরও কিছুটা সময় দেয়া হত। কিন্তু সবশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক বিতর্কিত বক্তব্য হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। তাই ফজলুর রহমানের বিষয়েও দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে বিএনপির দেয়া শোকজেও তাকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। তিনি ক্রমাগত গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তার বক্তব্যকে সম্পূর্ণরূপে দলীয় আদর্শ ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী বলেও আখ্যা দিয়েছে বিএনপি।

শোকজের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ফজলুল রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে শোকজের উত্তর আমি আমার দলকে দেব। এটা নিয়ে এখনই বাইরে কথা বলতে চাই না। দল যা সিদ্ধান্ত নেয় তা মেনে নেবো।’ 

বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ফজলুর রহমানের বক্তব্যের কারণে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছি। আমরাও চাই তার মতো যারা বিতর্কিত কথা বলে দলের সুনাম নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা।’ 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বিতর্কিত বক্তব্য, কর্মকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার প্রভাব নির্বাচনেও পড়তে পারে।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিএনপি চেষ্টা করছে সবকিছু গুছিয়ে নির্বাচনমুখী হতে। কিন্তু কিছু কিছু নেতার কর্মকাণ্ডের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলতে গিয়ে অনেকে খেই হারিয়ে ফেলছেন।তারা হয়তো নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে চান। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।’

যেসব নেতাদের কথাবার্তা কিংবা কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত হয় সেসব নেতাদের শুরুতেই সতর্ক করে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন এই ঢাবি শিক্ষক।

ফজলু-রুমিনের যত বিতর্কিত বক্তব্য

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে নানা ইস্যুতে বিএনপির যেসব কেন্দ্রীয় নেতা ‘বিতর্কিত’বক্তব্য দিয়েছেন তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ফজলুর রহমান। ফজলুর রহমান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, রুমিন ফারহানা গত একবছরে বিতর্কিত বক্তব্য রেখে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা হয়েছে।

এদের মধ্যে দুদু ও বুলুকে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিতর্কিত ও দলের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন হয় এমন বক্তব্য না দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয় চিঠিতে। তবে এসব নেতাদের মধ্যে বেশি আলোচনায় থাকা ফজলুর রহমানকে এতদিনেও কোনো সতর্ক কিংবা শোকজ করেনি।

ফজলুর রহমান অন্তবর্তকালীন সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে এনসিপির শীর্ষ নেতাদেরও প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। সবশেষ গতবছরের ৫ আগস্টের শেখ হাসিনার পতনের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে দায়ি করে টকশোতে বলেছেন, ‘এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মূল পরিকল্পনাকারী ‘কালো শক্তি’ জামায়াত ।’

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতারা ফেসবুকে ফজলুর রহমানের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন।

গত ডিসেম্বরে এক বক্তব্যে ইউনূস সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আপনি দেশ চালাইবেন, নাক টিপলে দুধ বের হবে, কে আপনি?’  ‘হাসিনা খারাপ, আওয়ামী লীগ খারাপ না’- গত জুলাইয়ে এমন বক্তব্য রেখেও তিনি তোপের মুখে পড়েন। আবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে প্রধান উপদেষ্টা ১২ ঘণ্টা প্লেন চালিয়ে লন্ডন গেছেন- এমন বক্তব্যও দিয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।

‘৫০০ টাকার জায়গায় ১০০০ টাকা দিলে ওয়াজের বা মোনাজাতের ভাষা পরিবর্তন হয়ে যায়’- বলে আলেমদের কটাক্ষ করে টকশোতে বক্তব্য দিয়েছেন এই আইনজীবী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কিছু কিছু নেতার বক্তব্যে আমরা বিব্রত। যে কারণেই তাদের শোকজ করা হচ্ছে, সতর্ক করা হচ্ছে।সবাইকে তো দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।আমরা চেষ্টা করছি এমনটা যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে।’

এরআগে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ধানমন্ডি ৩২নম্বর ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘বিভৎস মববাজি’ বলে আখ্যা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সবশেষ ইসিতে হাতাহাতির পর এনসিপি নেতাদের কটাক্ষ করে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। যা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

বিইউ/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর