দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে 'জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এক বছরে যদি একজন ব্যক্তি একটি মাত্র নথি দেখিয়ে প্রমাণ করতে পারেন যে আমরা দুর্নীতি করেছি, তবে আমরা সবাই রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেবো। জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) আসন ভাগাভাগির রাজনীতিতে যাবে না। আমাদের আসন দিয়ে কেনা যাবে না, আমরা বিক্রি হতে আসিনি। যারা অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে ছিলো, মিডিয়া ইন্টেনশনালি তাদের চরিত্র হরনের চেষ্টা করছে। তাদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আমরা কোনো দুর্নীতি করিনি।
বিজ্ঞাপন
এনসিপির এই নেতা অভিযোগ করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে গিয়ে তার সরকার বেচে দিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এবং রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একইসঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির কোথাও নেই।
হাসনাত বলেন, যে কারণে ৫ আগস্ট ঘটেছে তা বিদ্যমান রেখে নতুন রাষ্ট্র গঠন করলে একটা সময় তা আবার গণ প্রতিরোধের শিকার হবে। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, মিলিটারি, মিডিয়া ছাড়াও যে যে কারণে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ১৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমরা তাদের কাছেই আবার তুলে দিছি গণমুখী রাষ্ট্র করার জন্য। কালেরকণ্ঠ পত্রিকার কঠোর সমালোচনাও করেন এনসিপির এই নেতা।
আলোচনা সভার শুরুতেই যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক খান ইংরেজদের দেওয়া পাকিস্তানের বৃটিশ সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ৭২ এর সংবিধান এবং বর্তমানে কেন এই সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার বলেন, আমরা যখন গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলি, তখন অনেকেই মন্তব্য করে আমরা সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাই। আমরা তা চাই না। আমরা চাই গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর জাতীয় নির্বাচন হবে। এটা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সরকার যেকোন সময় নির্বাচন দিতে পারে।
বিজ্ঞাপন
আখতার বলেন, যারা মনে করেন গণপরিষদ নির্বাচন হলে ক্ষমতার জন্য এক ধরনের বাধা তৈরির আশঙ্কা থাকতে পারে, তাদের কাছে আমার স্পষ্ট আহ্বান থাকবে, নির্বাচন করেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একইসঙ্গে গণপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য হিসেবে থাকবে। তারা নতুন সংবিধান প্রবর্তন করে সরকার পরিচালনা করবে। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না।
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এবং বর্তমান বাংলাদেশের সংকট নিরসনে গণপরিষদ নির্বাচনই একমাত্র পথ। জুলাই ঘোঘণাপত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ করা উচিত ছিলো। জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে জনগণকে না রেখে, শহীদ পরিবারকে না রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে রেখে ইউনুস সাহেব জনগণের সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন।
পাটওয়ারী বলেন, সামনে যদি কোনো নির্বাচন হয় তা অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। তার মতে, নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া উচিত। ১৯৭২ সালের সংবিধান হলো ফ্যাসিস্ট তৈরির কারিগর, যা তৈরি হয়েছে ফ্যাসিস্ট মুজিবের হাত ধরে। তাই ৭২-এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।
যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ৭২ এর সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়েও কোন গণভোট হয়নি। যারা যুদ্ধের আগে পাকিস্তানের এম.পি. হতে চেয়েছিলো তারাই যুদ্ধের সময় ভারতে পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধের পরে এসে আবার স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতা নেয়। তারা বলে এটাই গণপরিষদ সরকার। অথচ এটা করার সময় কোন গণভোটের আয়োজন করেনি।
এম/ক.ম

