“ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি ছিল শাপলা চত্বর” ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহীদ রেহান আহসানের বোন ফারিয়া। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তিনি। ক্ষমা না চাইলে শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টে এসব বলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট থেকে তিন দিনব্যাপী ‘৩৬ শে জুলাই আমরা থামবো না’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ সময় বিচারিক হত্যাকাণ্ডের চিত্র প্রদর্শনীতে আওয়ামী লীগের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শিত হয়। এ নিয়ে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তখন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মাহির বলেন, ‘শাহবাগ আন্দোলন ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। সেই দাবিতেই আন্দোলন হয়েছে এবং বিচারও কিছু অংশে সম্পন্ন হয়েছে। যারা বলছে এই আন্দোলন থেকে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে, তাদের প্রশ্ন করুন- হেফাজতের ওপর ভর দিয়ে শাপলা চত্বরে হামলা চালিয়ে, ৫ মে ঢাকা শহরে তাণ্ডব চালিয়ে কারা ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়েছে?’
তখন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন ‘শাপলা চত্বর কি ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি ছিল? জবাবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘অবশ্যই।’ মাহিরের এই বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শহীদ রেহান আহসানের বোন ফারিয়া স্মরণী ভাষা। তিনি বলেন, ‘শহীদ রেহানের বোন হিসেবে, এবং একজন মানুষ হিসেবে—একটা কথা স্পষ্টভাবে বলছি, যে ভাষায় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শহীদ হওয়া মাদরাসার এতিম শিশু ও আলেমদের অপমান করেছে, তা শুধু অমানবিক নয়—তা ঘৃণ্য। এই দেশে যারাই রাষ্ট্রের গুলিতে নিহত হয়েছে—তারা শহীদ। সেটা শাহবাগ হোক, শাপলা হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হোক, কিংবা মাদরাসার এতিম শিশু। গণহত্যা, গণহত্যাই। কোনো এক্সকিউজ চলে না।’
ফারিয়া বলেন, মাহিরকে তার বক্তব্যের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতেই হবে। না হলে, শহীদদের মর্যাদা রক্ষায় আমি ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। আপনারা আমার পাশে থাকেন বা না থাকেন—আমি ৫ মে শহীদ হওয়া সবার পক্ষে থাকব। আর ফ্যাসিবাদের এনাবেলার সেই গণজাগরণ মঞ্চের মুখোশ বহু আগেই খুলে গেছে।’
বিজ্ঞাপন
এরপর আরেকটি লেখায় তিনি বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেই হবে—আপনার সেই ঘৃণিত, সাম্প্রদায়িক ও শাপলার শহীদদের প্রতি দেয়া অবমাননাকর বক্তব্যের জন্য।
আমরা আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি— এটা আর শেখ পরিবারের বাংলাদেশ নয়। এটা জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশ। যেখানে শহীদদের রক্তের অপমান মেনে নেওয়া হয় না এবং যেখানে ধর্ম, বিশ্বাস, কিংবা পোশাক দেখে শহীদের মর্যাদা নির্ধারিত হয় না।
আগামীকাল রোববার শেষ হবে ফারিয়ার বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা। এরপর কী করবেন জানতে চাইলে ফারিয়া বলেন, আমি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবো, সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
রেহান আহসান ২০১৩ সালের ৫ মে, শাপলা হত্যাকাণ্ডের সময়ে গুলিতে মারা যায়। পরের দিন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে তার লাশ পাওয়া যায়। তিনি বুয়েটের ২০০৯-১০ সেশনের সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড প্রকৌশল) বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবে ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং সে কারণেই হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বলে জনিয়েছেন ফারিয়া।
ইএইচ/ক.ম

