রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চাঁদাবাজ ও কর্তৃত্বমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখছি: ছাত্রশিবির সভাপতি

জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

shibir
শিবির সভাপতি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি: ঢাকা মেইল

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, এ জমিনে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। এ জমিন বৈষম্যমুক্ত করা। অন্যায়ভাবে কেউ জুলুম করবে না, চাঁদাবাজি করবে না, অবৈধ কর্তৃত্ব খাটাবে না, ক্ষমতার দাপট দিয়ে নির্যাতন করবে না- আমরা এমন একটি সমাজেরই স্বপ্ন দেখছি। আমরা এই পুরো প্রজন্ম আমরা প্রতিজ্ঞা নেব, আমাদের শহীদ ভাইয়ের রক্তের যে দায়, সে দায় থেকে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


রাজশাহী কলেজ মাঠে শহীদ আলী রায়হানের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির মহানগর শাখা এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি।

এ সময় শহীদ আলী রায়হান সম্পর্কে তিনি বলেন, তার সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। সবচেয়ে ভালো লাগত, উনি সহজ সরল ছিলেন, একনিষ্ঠ ছিলেন ইসলামের প্রতি, ইসলামী আন্দোলনের প্রতি।

শিবির সভাপতি বলেন, শহীদদের বাসায় যখন যাই, সবার একটাই আকুতি শুনি, সবার একটাই দাবি- তাদের সন্তানরা পরিবারের সদস্যরা যে জন্য জীবন দিয়েছেন, এ জমিনে যেন সেটা বাস্তবায়িত হয়। আমরা কাউকে ভয় করি না নাই, ভয় করবো না। কারও চোখ রাঙানি ভয় কাউন্ট করব না।

পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জাহিদুল ইসলাম। জুলাই ঘোষণাপত্র নিশে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র সারা বাংলাদেশের ছাত্র জনতার আশা আকাঙ্ক্ষার জায়গা ছিল, ঘোষণার পর আমরা কিছুটা আশাহত হয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পূর্ণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। জুলাই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কৌশলগুলো অনেকটা অবজ্ঞা করা হয়েছে। বিশেষ করে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ভূমিকা ছিল, মিডিয়া কর্মীদের ভূমিকা ছিল। এভাবে অনেক স্টেকদের বিষয়গুলো সেভাবে আসেনি। আমরূ দেখেছি, ছোট্ট ছোট্ট বিষয়গুলো সরকার ইনক্লুড করতে পারেনি। আরও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলিত হওয়ার দরকার ছিল।


বিজ্ঞাপন


shibir2

সাংবাদিক হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নির্মম ও মর্মান্তিক ছিল। জড়িতদের সরকার গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে এবং বিচার করবে বলে আশা করি। শুধু বিচারই নয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যবস্থা করবে। জোর দাবি থাকবে, বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে দেখবে।

ছাত্রদলের সঙ্গে দূরত্ব নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই প্রশ্নে আমরা এক। রাজনৈতিক ভিন্নতা আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। ভিন্ন বক্তব্য আসবে, তবে সেটা যেন স্বাভাবিক ক্রাইটেরিয়া লঙ্ঘন না করে। সবাই যেন বজায় রাখে। সৌজন্যতা আমাদের মাঝে থাকেন, বক্তব্যে কেউ হয়ত অসংলগ্ন হয়ে যান।

সবশেষ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের বিচার নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়। এ সময় শিবির সভাপতি বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্য। সবকিছুর চাক্ষুষ প্রমাণ রয়েছে, দালিলিক প্রমাণ রয়েছে, ভিডিও রয়েছে, এরপরও এক বছরে যে ধীরগতি এটা আমাদেরকে হতাশ করে। শহীদ পরিবারের সাথে আমরা কথা বলেছি, তারাও হতাশা প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করব, সরকার জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে, বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে।

এদিনের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি মোহা. শামীম উদ্দীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি ইমরান নাজির। বক্তব্য দেন শহীদ আলী রায়হানের পিতা মুসলেম উদ্দীন, শহীদ সাকিব আনজুমের পিতা মাইনুল হক, জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী, নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জেলা সেক্রেটারি গোলাম মর্তুজা, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক ও জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন সরকার, সাবেক দাওয়াহ সম্পাদক হাফেজ নুরুজ্জামান, সাবেক মহানগরের সভাপতি সারওয়ার জাহান প্রিন্স ও হাফেজ মো. খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ ইবরাহিম, মানবাধিকার সম্পাদক সিফাত উল আলম, ফাউন্ডেশন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভূইয়া, রাজশাহী মহানগরের অফিস সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এ সময় শহীদ আলী রায়হানের পিতা মুসলেম উদ্দিন বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ায় বাইরে, তাদের আমি ফাঁসি চাই।

রাজশাহীর আরেক শহীদ সাকিব আনজুমের পিতা মাইনুল হক বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচার পতন হলেও আইনশৃঙ্খলা প্রশাসন একই রকম আছে। দেশবাসীর কাছে শহীদের পিতা হিসেবে আমি অনুরোধ করব, আগামীর বাংলাদেশ যেন মানবিক বাংলাদেশ হয়, সুন্দর ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হয়। এখন আইনশৃঙ্খলার এত অবনতি যে, নির্দয়ভাবে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটু তৎপর হলে, এত জীবন দিতে হয় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।

shibir3

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক হাফেজ মো. নুরুজ্জামান বলেন, ফজরে ওঠার জন্য কনকনে শীতে লেপ রেখে ঘুমাতেন, যাতে ঘুম সেভাবে না আসে, উঠতে পারেন। ইসলামী আন্দোলনের সবাই যদি ফুল হয়, গোলাপ ফুল ছিল আলী রায়হান।

সাবেক কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক ও জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন সরকার বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন আলী রায়হান। শুধু ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন না, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য জীবন দিয়েছেন। চাঁদাবাজি সন্ত্রাসীর রাজনীতিতে পদ্মা নদীতে ছুড়ে ফেলার জন্য ছাত্রসমাজকে আহ্বান জানাচ্ছি।

জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন আলী রায়হান, আনুগত্যশীল ছিল। আলী রায়হান, সাকিব আনজুমের রক্তে ভেজা এ মাটিতে ইসলামী খেলাফত কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ। তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। তাদের এই রক্ত ইসলামী বিপ্লবের পথকে ত্বরান্বিত করবে। দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।

পরে সন্ধ্যায় শহীদ আলী রায়হানকে নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন হয়। প্রত্যয় শিল্পী গোষ্ঠী পরিবেশন করে।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর