রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চট্টগ্রামে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি, অল্পে রক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

BNP1
অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন গোলাম আকবর খোন্দকার। ছবি: ঢাকা মেইল

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। গলা সরিয়ে নেওয়ায় তিনি রক্ষা পেয়েছেন। গুলির আছড়ে গলায় ক্ষত হয়ে রক্ত ঝরছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন নাথ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৮টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছত্তারহাট এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অনুসারীরা গোলাম আকবর খোন্দকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।  এরপর দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাঁধে।


বিজ্ঞাপন


এতে ছোড়া ইট-পাটকেল ও গুলিতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্যতম হলেন, রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকারের এপিএস আসিকুর রহমান, যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, মোহাম্মদ হুমায়ুন প্রমুখ।

রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, মঙ্গলবার বিকেলে গোলাম আকবর খোন্দকারকে নিয়ে নেতাকর্মীরা গাড়িবহর সহকারে রাউজান পৌরসভা এলাকার সুলতানপুরে প্রয়াত উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও রাউজান উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে পৌরসভার মুন্সীঘাটা এলাকা থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা। এসময় পৌরসভার ছত্তারহাট এলাকায় উভয় গ্রুপ মুখোমুখি হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি কালো রঙের পাজেরো গাড়িতে গোলাম আকবর খোন্দকারসহ কয়েকজন ছিলেন। সামনে-পেছনে আরও কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা ছিলেন। ছত্তারহাট এলাকায় তাদের গাড়িবহর পৌঁছার পর দেখা যায়, আনুমানিক ৫০-৬০ গজ দূরে লাঠিসোঁঠা নিয়ে কয়েকশ লোক সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এতে গোলাম আকবরের গাড়িবহর থেমে যায়। তখন তার গাড়ি ও নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। তখন পাল্টা ইট-পাটকেল তাদের দিকেও ছোঁড়া শুরু হয়।

সংঘর্ষের মধ্যেই গাড়ি থেকে গোলাম আকবর খোন্দকারের চালক নামার পর অপরদিক থেকে ছোঁড়া ইটের আঘাতে তিনি রক্তাক্ত হন। এরপর গোলাম আকবর খোন্দকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় গলা সরিয়ে নেওয়ায় তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। এসময় গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি বারবার সেলিম নামে একজনের কাছ থেকে চাবি খুঁজছিলেন। কিন্তু চাবি না পাওয়ায় গাড়ি সরিয়ে নিতে সক্ষম হননি। এর মধ্যেই বিপরীত দিক থেকে লোকজন ইট-পাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে একেবারে গাড়ির সামনে চলে আসে। ইটের আঘাতে গাড়ির কাচ ভেঙে ছিটকে পড়তে দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


BNP2

তখন গোলাম আকবর খোন্দকার গাড়ি থেকে নেমে যান এবং নেতাকর্মীরা তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। তবে গাড়িতে থাকা অবস্থায় ইট এবং ভাঙা কাচের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত হন তিনি। এরপর সড়কের ওপর কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর সংঘাতে জড়িতরা চলে যান।

আর ঘটনার পরপরই গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা ঘটনাস্থলে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। বর্তমানে রাউজানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপর রয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গোলাম আকবর খোন্দকারের সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা তার ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সুলতানপুরে যাচ্ছিলাম। ছত্তারহাট এলাকায় আমাদের ওপর আক্রমণ হয়। গোলাম আকবর খোন্দকার সাহেবের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের আরও কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে ২০-৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

অর্জুন কুমার নাথ জানান, গোলাম আকবর খোন্দকারকে লক্ষ্য করেই গুলি করা হয়েছে। গলার পাশ দিয়ে গুলি চলে গেছে! রক্তপাত হচ্ছে। পুলিশ এসে হামলাকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর আমরা তাকে অন্য গাড়িতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসি।

গোলাম আকবর খোন্দকার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি আগেই সংবাদ পেয়েছিলাম তারা হামলা করবে। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। পরে একটি নোট পেলাম, গিয়াস উদ্দিনের নির্দেশে আজকে সারাদিন ছত্তারহাট থেকে মুন্সিঘাটা পর্যন্ত মিছিল করা হবে। চিন্তা করলাম এটা একটা অশুভ পরিকল্পনা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল জানিয়ে খোন্দকার বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালাম, তারা আমাকে কনফার্ম করলো, কোনো অসুবিধা নেই, আমরা আছি। তারপর আমরা আসছি। এরপরও হামলার শিকার হলাম।

সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। মুঠোফোনে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি গত এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। ঘুমে ছিলাম।

BNP3

তবে তার অনুসারী রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন কর্মসূচি বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। ফটিকছড়ি থেকে সন্ত্রাসী ভাড়ায় এনে গোলাম আকবরের লোকজন হামলা চালিয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু ঢাকা মেইলকে বলেন, রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। আমাদের ওসি উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। তিনি একেবারে সংঘর্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বড় রিস্ক নিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করেছেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। একজন সিনিয়র লিডারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। উনি আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। দুটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো এসব বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার এবং দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী উভয়ে রাউজান উপজেলার বাসিন্দা। রাউজানে বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই নেতার আলাদা বলয়ে বিভক্ত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাউজানে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।

আইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর