শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আ.লীগ প্রতিষ্ঠার নীতি থেকে সরে যাওয়া উচিত হবে না: অধ্যাপক আরেফিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২২, ১২:৫২ এএম

শেয়ার করুন:

আ.লীগ প্রতিষ্ঠার নীতি থেকে সরে যাওয়া উচিত হবে না: অধ্যাপক আরেফিন

১৯৭১ সালে দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতির মুক্তি অর্জনের প্রতিষ্ঠাতাকালীন নীতি থেকে কখনই বিচ্যুত হওয়া উচিত নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রাক্কালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ যাত্রায় আওয়ামী লীগ এ দেশের মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠার এ মূলমন্ত্র থেকে এটির কখনই সরে যাওয়া উচিত হবে না।’


বিজ্ঞাপন


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার এবং তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার পরামর্শও দেন তিনি।

তিনি বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল আওয়ামী লীগে বিভিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করছে এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে বলে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার সময় এবং বঙ্গবন্ধুর জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময়ও এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে এবং পদ্মসেতু নির্মাণ কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আরেফিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে যারা জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দলের প্রধান শক্তি।’


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন এগিয়ে যায়, বাংলাদেশও এগিয়ে যায়।’ তিনি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হয় তা পূরণ করেন এবং জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে তিনি চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

দেশের স্বাধীনতা অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা বর্ণনা করে তিনি বলেন, পাঁচ দশক আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতি দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতিকে পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করে এবং অবশেষে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।’

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ পরাধীনতা থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল। 
তিনি বলেন, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ এ মাটির সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সর্বদা নিবেদিত।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৪৮ সালে ঢাবির আইনের ছাত্র থাকাকালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

কিন্তু তিনি নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য নয়, ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করার জন্য ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। 
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক চলছিল, তখন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ সমাবর্তনে ভাষণ দানকালে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট করে ঘোষণা দেন যে, ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ 

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, জিন্নাহর ঘোষণার পর জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ব্যারিস্টারের অযৌক্তিক ঘোষণার বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্রনেতা মুজিব বলেছিলেন: ‘আমরা চাই বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবে কারণ জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬ শতাংশই বাংলায় কথা বলে।’ ‘আমরা বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা দাবি করতে পারি কিন্তু আমরা তা করছি না। আপনি পশ্চিম পাকিস্তানের একটি ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করুন এবং বাংলাকে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করুন।’

ড. আরেফিন উল্লেখ করেন, একজন তরুণ ছাত্রনেতার এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি তার সারাজীবনে কতটা যৌক্তিকভাবে সবার স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং দলটি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মতো বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়।

তিনি বলেন, এই দীর্ঘ যাত্রায় আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন বাধা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তার নৃশংস হত্যাকা-ের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেন বাংলাদেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য ‘প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল।

শিক্ষাবিদ অরেফিন বলেন, সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং পরে বিরোধীদলীয় নেতা এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ আবার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ছুটতে শুরু করে।

সূত্র : বাসস

একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর