শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের সমাধান না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১০:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের সমাধান না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’

বাংলাদেশি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনা শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। সম্পূরক শুল্কের সমাধান যদি সঠিকভাবে করতে না পারি তাহলে আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে আমরা আজ শিল্পপতিদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিশেষ করে রফতানিকারক বড় বড় শিল্পপতি যারা জড়িত আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিজনেস লিডার যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা (শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা) সবাই মনে করছেন এই নেগোসিয়েশনটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এখানে অনেকগুলো বিষয় আছে, এখানে ইন্ডাস্ট্রির বিষয় আছে, গার্মেন্টস সেক্টরের মতো বড় বিষয় আছে, এ্যামপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিষয় আছে, এখানে নিরাপত্তাজনিত কিছু বিষয় চলে এসেছে এবং সেখানে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের বিষয়গুলো আছে। এই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের আগামী দিনের অর্থনীতির অনেক কিছু জড়িত।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে চেষ্টা করব ব্যবসায়ীদের মতামতসহ আমাদের বিষয়টা সরকারকে জানানোর। এখানে মনে রাখতে হবে, সমন্বিত একটা বিষয় আছে। আসলে বিষয়টা এককভাবে কিছু করার বিষয় নয়, সমন্বিতভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে এখান থেকে আমাদের অর্জন রক্ষা করা যায়; সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।

৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে তারা ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এরপর থেকে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনায় বসে।

বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ভারতও চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে। সেজন্য আলোচনাও চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে দেশে ফিরে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বসিরউদ্দিন বলেন, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়ে গেছে। সেগুলো আলোচনা করে অতি দ্রুত আমরা তৃতীয় দফার আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি। আশা করছি, আল্লাহর রহমতে ভালো ফল আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, টোটাল এক্সপোর্টের একটা বিশাল অংশ আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এক্সপোর্ট করি। সেখানে গার্মেন্টসের একটা বিশাল অংশ যায়। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্যে যায় তার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫/১৬ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি নয়, এর সঙ্গে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের সঙ্গে আরও অনেক খাত জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপি আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪শ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া পণ্যের একটা বিশেষ অবদান রয়েছে। আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার মধ্যে ব্যবসায়িক নেতারা বিকেলে বনানীর হোটেল সেরিনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করলেন।

বৈঠকে ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি এ কে আজাদ ও সিমিন রহমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, বিজেএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ’র সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, লেদার গুডস অ্যান্ড ম্যানুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নিজাম মনসুর সিরামিক ম্যানুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ জাব্বার, বাংলাদেশে টেরিটাওয়াল অ্যান্ড লেলিন মেন্যুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

আমীর খসরুর সাথে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাসভীরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন ছিলেন।

বিইউ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর