রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তিনি বিএনপি নেতা হলেন কবে, প্রশ্ন ঝালকাঠির নেতাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

faizul
বিএনপি ছাড়ার ঘোষণায় আলোচনায় এসেছেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় বর্বরোচিতভাবে সোহাগ হত্যার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নাম আসায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সংগঠন থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘটনাও ঘটছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ড. ফয়জুল হকের বিএনপি ছাড়ার ঘোষণাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি আদৌ কি বিএনপি করতেন? বিশেষ করে তার নিজ জেলা ঝালকাঠি বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের ভাষ্য- ৩০ বছর ধরে তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু পদত্যাগ করা ফয়জুল হক যে বিএনপি করেন তারা তা জানেন না।

শনিবার (১২ জুলাই) নিজেকে মালয়েশিয়া বিএনপির সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক দাবি করে ফেসবুকে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ড. ফয়জুল হক। এই ঘটনার পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন সময় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার একান্তে ছবি পোস্ট করছেন ফেসবুকে। নিজ এলাকা ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে আমিরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতার নানা প্রমাণ মিলেছে। এই অবস্থায় স্থানীয় নেতারা প্রশ্ন তুলছেন- বিএনপি থেকে পদত্যাগের কথা বললেও ফয়জুল হক বিএনপির রাজনীতি করেন সেটা তারাই জানেন না।


বিজ্ঞাপন


ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই লোক যে বিএনপি করেন তার সম্পর্কে আমি তো বিস্তারিত কিছু জানি না। জামায়াতের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতা একজন আছেন অ্যাডভোকেট, তার সঙ্গে কথা বলে কালকে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’

Faizul2
ইসলামী আন্দোলনের গোলটেবিলে। ছবি: সংগৃহীত

ফয়জুল হক বিএনপির সদস্য কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলের কেউ হলে তো আমি চিনতাম। তার তো সেভাবে কখনো কোনো ভূমিকাও দেখিনি। সদস্য হওয়া তো পরের বিষয়।’

অবশ্য ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার বিষয়ে জানতে ড. ফয়জুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত মালয়েশিয়া বিএনপির কমিটির প্রেস রিলিজ পাঠান। যেই তালিকার ৪০ নম্বরে সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদকের জায়গায় মো. ফয়জুল হক নাম রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এছাড়াও ফয়জুল হক ২০২১ সালে করোনার সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এলাকায় করোনা প্রতিরোধক সামগ্রী বিতরণের একাধিক ছবি পাঠান। যেগুলো তার সৌজন্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফয়জুল হক।

যেখানে ঝালকাঠি-রাজাপুর আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তাও লক্ষ করা গেছে। তার ফেসবুকেও নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝালকাঠি-১ আসনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে একাধিক পোস্ট নজরে এসেছে।

তবে সম্প্রতি পোস্ট করা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যেসব পোস্টার দেখা গেছে তাতে কোনো দলের নাম কিংবা প্রতীক অথবা দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি দেখা যায়নি।

যদিও ঝালকাঠির একাধিক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর ভাষ্য, জামায়াত থেকে তিনি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে তারা জানেন। জেলা জামায়াতের সবশেষ সমাবেশেও ফয়জুল হক অংশ নিয়েছেন। বিএনপির নেতা হলে তো সেই সমাবেশে যাওয়ার কথা না।

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ফয়জুল হককে মূলত কায়েদ সাহেব হুজুরের নাতি হিসেবে লোকজন চিনে। কিন্তু বিএনপির দেশে কিংবা বিদেশের নেতা হিসেবে তো আমিও চিনি না। ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। আমাকেও তো কোনোদিন বলেনি আমি মালয়েশিয়া বিএনপির সঙ্গে আছি। হঠাৎ করে পদত্যাগও করে ফেলছেন, কেমনে কি বুঝতেছি না। আমি ৩০ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমি বিএনপির লোক হিসেবে তাকে চিনি না। সদস্য হয়েছেন বলেও আমার জানা নেই।’

আরও পড়ুন

বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন ড. ফয়জুল হক

মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রদল নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক!

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখা গেছে, বিদেশে অবস্থানকালীন ভার্চুয়াল মাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন ফয়জুল হক। আওয়ামী লীগ আমলে সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দিতেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনের সময় বিদেশেও অনেক কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা গেছে তাকে। যেগুলোর বেশিরভাগই ইসলামি ভাবধারার সংগঠনগুলোর ব্যানারে। তবে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যাওয়ার তথ্য মেলেনি।

Faizul3
জামায়াতের ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেতা আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ১০ আগস্ট দেশে ফিরেন ফয়জুল হক। এরপর থেকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ডানপন্থী বিভিন্ন দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়েছে। এমনকি সবশেষ শনিবার (১২ জুলাই) পিআর পদ্ধতির সমর্থনে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত গোলটেবিলে অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি। এখানে বিএনপির বাইরে বেশিরভাগ দলের প্রতিনিধি ছিলেন। ফয়জুল হক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তার এই গোলটেবিলে যাওয়ার কথা নয় বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপির বিরুদ্ধে পিআরের পক্ষে জনমত গড়তেই আজকের গোলটেবিল আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে তার অংশ নেওয়াই প্রমাণ করে তিনি বিএনপির কেউ নন।

জানা গেছে, ড. ফয়জুল হক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ সম্পন্ন করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট সোসাইটির ভিপি এবং প্রেসিডেন্টও ছিলেন। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের সংগঠন বিএসইউএম এর সভাপতি ছিলেন তিনি। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর