মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব করায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর চটেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার। দলের এই অংশের নেতাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই নিয়োগকে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, মুজিবুল হক চুন্নু দলের বৈধ মহাসচিব।
সোমবার (৭ জুলাই) যৌথ বিবৃতিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া দেয়া চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন।
বিজ্ঞাপন
জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়।
তারা বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে।
জাপার প্রভাবশালী দুই নেতা বলেন, আমরা বিস্মিত যে, দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি প্রদান করা হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানিকর আচরণ।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, আমরা মনে করি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হতে হবে। দলে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি। জাতীয় পার্টির ত্যাগী, আদর্শবান নেতাকর্মীদের প্রতি অন্যায় ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এই দুই নেতা।
এর আগে জাতীয় পার্টির দফতর থেকে জানানো হয়, দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে মুজিবুল হক চুন্নুকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় মহাসচিব করা হয়েছে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে।
বারবার ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়া জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি বিরোধ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২৮ জুন দলের জাতীয় সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছিলেন জিএম কাদের। এর মধ্যেই জাপায় নতুন নেতৃত্ব গড়ার উদ্যোগ নেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগ সদস্য। বিশেষ করে কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদপ্রত্যাশী বলে জানালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে জিএম কাদেরের কপালে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যেনু জটিলতার কথা বলে ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করেন জিএম কাদের।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পার্টিতে দুটি বলয় স্পষ্ট হয়ে যায়। বিরোধী নেতারা প্রকাশ্যে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেন। এর মধ্যেই মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে সরিয়ে দেওয়ায় জাতীয় পার্টির সংঘাত নতুন রূপ নিলো।
বিইউ/জেবি

