ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবারই (২৪ জুন) স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সংশ্লিষ্টতার দাবি তুলেছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এবার রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে একই দাবি জানালেন তিনি।
বুধবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক বলেন, ‘নগর ভবনে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে উপদেষ্টা আসিফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা।’
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নগর ভবনে হামলাকারীরা উপদেষ্টা আসিফের ঘনিষ্ঠ: দাবি ইশরাকের
তিনি বলেন, ‘নিজেদের বিএনপি ঘরানার পরিচয় দিলেও তারা (হামলাকারীরা) দলের কোনো পদে নেই। বরং তারা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলের মেয়রদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে দুর্নীতি লুটপাট করেছে। তাদের মূলহোতা গতকালকে আন্দোলনকারীদের হত্যাচেষ্টা করা গোলাম কিবরিয়া রুবেল। আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবেল তার লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।’

ইশরাক বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগের কুখ্যাত রুবেল এক দিনও আন্দোলনে ছিল না। কিন্তু নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করে। তদবির করে কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে অবৈধ অর্থনৈতিক সুবিধা করে দেয় এনসিপি ও রাজনৈতিক কিছু নেতাদের। শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করেছে সে।’
বিজ্ঞাপন
ডিএসসিসির ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, একদম শুরু থেকেই এই অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে মেয়র পদে বসে নগর পরিচালনা করার পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে অবৈধ তাপসের বিরুদ্ধে পাওয়া রায়টি একটি স্থায়ী দলিল হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য, আইনের শাসনের চূড়ান্ত বিজয়ের একটি প্রমাণ হিসাবে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান, যা কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’
আরও পড়ুন: সেবাদান কার্যক্রম স্বাভাবিক হতেই নগর ভবনে সশস্ত্র হামলা, আহত কয়েকজন
ইশরাক বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার পদে পদে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়ে শেষ বেলায় গিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের যে দল নিরপেক্ষ নয়, আমাদের সেই বয়ানটি চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পরাজয় ঘটেছে এই সরকারের নিরপেক্ষতার পর্দার পেছনে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা অগণতান্ত্রিক শক্তির। ভেস্তে গিয়েছে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বিনা ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতা দীর্ঘায়ত করার কোনো সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত। বিজয় হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী জনগণের।’
সম্প্রতি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিভিন্ন বক্তব্যের বিষয়ে ইশরাক বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ বলেছে, বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে ইশরাকের আন্দোলন হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার ঢাকার ভোটারদের চরম অপমান করা হয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে আন্দোলন করা ঢাকার এই জনগোষ্ঠীকে একটি বাক্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নাগরিক থেকে পশুর মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটার জন্য তাকে অবশ্যই নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আসিফ আরও বলেন, ইশরাককে ‘মিসগাইড’ করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেছেন। তিনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আমাকে চরমভাবে হেয় করেছেন। আমাদের ঢাকা নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনকে এইভাবে অপমান করার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকার অধিবাসীদের প্রতি চরম অবমাননাকর এই বক্তবার জন্য তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: ইশরাকের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিন বিকেলে সেই আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে যান কোর্টের রায়ে ডিএসসিসির মেয়রের পদ পাওয়া ইশরাক হোসেন। সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দাবি করেন, এই হামলায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠজনরা জড়িত।
মঙ্গলবার বিএনপির স্লোগান দিয়ে ইশরাক সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে ইশরাক বলেন, ‘বিএনপির স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো দলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।’ এই হামলায় বিএনপি বা শ্রমিক দলের কেউ জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি। বরং দায় চাপান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ওপর।
এ নিয়ে মঙ্গলবারই ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন এই জুলাই বিপ্লবী। সেখানে ইশরাককে ইঙ্গিত করে আসিফ লেখেন, ‘কিছু হলেই আসিফ মাহমুদকে দায় দিয়ে দাও। নিজ দলের কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আন্দোলনের ট্র্যাপে পড়ার দায়ও আসিফ মাহমুদকে দিয়ে দাও।’
আরও পড়ুন: শপথ ছাড়াই মেয়রের ‘আসনে’ বসলেন ইশরাক!
আসিফ আরও লেখেন, ‘এর আগেও একবার আন্দোলনরত দুই গ্রুপ মারামারি করে মাথা ফাটায়, আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। দখলকৃত নগরভবনে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ। এর আগেও নগরভবনের দরজায় তালা লাগিয়ে সামনে দাড়িয়ে বলেছেন, ‘আসিফ মাহমুদ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।’
এএসএল/এএইচ

