বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ঢাকা

এবারের ঈদেও ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগ, দিশেহারা নেতাকর্মীরা

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২৫, ১১:২২ এএম

শেয়ার করুন:

awamileague
এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ছবি: ঢাকা মেইল

টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সবখানে। ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর হাট থেকে শুরু করে সবখানেই তাদের একচেটিয়া দাপট ছিল। সামর্থ্যবান নেতারা একাধিক কোরবানি করে কর্মীদের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দিতেন। নানাভাবে কর্মীদের সহযোগিতা করতেন।

গতবারের ঈদুল আজহায়ও ছিল তাদের রমরমা অবস্থা। কিন্তু এবারের ঈদে কোথাও নেই তারা। গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারের ঈদুল আজহাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাটবে ছন্নছাড়া অবস্থায়।


বিজ্ঞাপন


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছেন ছন্নছাড়া অবস্থায়। এর মধ্যেই সম্প্রতি দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। লাখ লাখ নেতাকর্মীর দলটির এখন তেমন কোনো অস্তিত্বই চোখে পড়ে না।

আরও পড়ুন

পতন, পলায়ন ও ক্ষমা প্রার্থনাসহ নানা ইস্যুতে মুখ খুললেন কাদের

এবারের ঈদে ভালো নেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছেন। কী করবেন, কীভাবে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন এ ব্যাপারে তাদের সামনে নেই কোনো রূপরেখা বা নির্দেশনা।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘পরিবার, বাড়িঘর, আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ঈদ করতে হচ্ছে আমাদের। আমরা তো আত্মগোপনে। হামলা-মামলায় জর্জরিত। ঈদ কি আর আমাদের আছে এখন? এত কষ্টের মধ্যে ঈদ কীভাবে হয়! নেতাকর্মীরা তাদের দুঃখ-দুর্দশা নানাভাবে আমাদের কাছে পৌঁছায়।’


বিজ্ঞাপন


Hasina11
ভারতে পালিয়েছেন দলীয় প্রধানসহ অনেক নেতা। ছবি: সংগৃহীত

তৃণমূলের এক কর্মী অনেকটা ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমরা ঘরছাড়া, ফেরারি। এই পর্যন্ত কেউ একটা কল বা মেসেজ দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়নি। কেমন আছি, কোথায় আছি, কীভাবে চলছি। অথচ গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ করে এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যান, নেতা হয়ে শত শত কোটি টাকা যারা কামিয়েছে আজ তারা কেউ এই বিপদের দিনে কর্মীদের পাশে নেই।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। এর মধ্যে রয়েছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শাজাহান খান, কাজী জাফরউল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।

আরও পড়ুন

পদত্যাগ করতে শেখ হাসিনার পায়ে ধরেছিলেন রেহানা!

এছাড়াও দলটির শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই এখন দেশছাড়া। এর মধ্যে রয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক  ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথ, আওলাদ হোসেনসহ আরও অনেকে।

55
ক্ষমতা হারানোর পর ব্যাপক জনরোষের শিকার হয় আওয়ামী লীগ। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু-একজন নেতা কিছু কথা বললেও দলটির দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কথা বলছেন না কেউ। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও কোনোটাই হালে পানি পাচ্ছে না। এতে তারা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরও পড়ুন

৫ আগস্ট বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম: ওবায়দুল কাদের

গত জুলাই-আগস্টে শত শত মানুষকে হত্যার দায়ও বর্তাচ্ছে আওয়ামী লীগের ওপর। দলের বেশির ভাগ নেতাই এখন মামলার আসামি। একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আওয়ামী লীগের গঠন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন বিচারকাজ চলছে দলটির শীর্ষ নেতাদের। ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরসহ অভিযুক্ত অনেকের বিচারকাজও শুরু হওয়ার পথে। এই অবস্থায় দলটির নেতাকর্মীদের জন্য ঈদ এসেছে নতুন এক ‘যন্ত্রণার’ উপলক্ষ হয়ে।

টিএই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর