রংপুরের বাড়ি স্কাই ভিউতে হামলা ও বাড়ির সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনার এক দিন পরই ঢাকায় ফিরলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। হামলার ঘটনায় মামলা হবে বলে জানিয়েছে তার দল।
শুক্রবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় জিএম কাদেরের রংপুর ত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, শুক্রবার সকালে জিএম কাদের নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে মায়ের কবর জিয়ারত ও পল্লী নিবাসে বড় ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর পুলিশ কমিউনিটি সেন্টারে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে যোগ দিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় রংপুর ত্যাগ করেন। পরে বিমান যোগে ঢাকা গমন করেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর বলেন, ‘জিএম কাদেরের স্কাই ভিউতে হামলা ও বাড়ির সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হবে- এমন সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তাছাড়া হামলার ঘটনায় কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করা হবে।’
জিএম কাদেরের নিরাপত্তার বিষয়ে এস এম ইয়াসীর বলেন, ‘বাড়িতে হামলার পরপরই জিএম কাদেরের নিরাপত্তার বিষয়টি সেনাবাহিনী দেখভাল করেছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে জিএম কাদেরের রংপুরে অবস্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। পরে রংপুর প্রেসক্লাব এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সেনাপাড়াস্থ জিএম কাদেরের বাসভবনের দিকে রওয়ানা হয় তারা।
বিজ্ঞাপন
এরপরই স্কাই ভিউতে হামলা ও সামনে থাকা মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় জিএম কাদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। হামলার পর থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জাতীয় পার্টির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে জড়ো হন, এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গ্রান্ড হোটেল মোড়ে অবস্থান নেন। পরে সেখানে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রাত পৌনে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা টাউনহলের দিকে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সেনপাড়া ও সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ ঘটনার পর নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়।
উত্তেজনার সুত্রপাত যেভাবে
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে রংপুর নগর ভবনের সামনে মেয়র ও কাউন্সিলরকে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও রসিকের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। বক্তব্যে বর্তমান সরকারকে একটি অথর্ব সরকার আখ্যা দিয়ে বলেন, তারা সবক্ষেত্রে ব্যর্থসহ নানা বিষয়ে সমালোচিত হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে মোস্তফাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর। মূলত এভাবেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এই উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩ দিনের সফরে রংপুরে আসেন জিএম কাদের। নগরীর স্কাই ভিউতে অবস্থান নেন তিনি এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এসময় জিএম কাদের মন্তব্য করেন, সুষ্ঠু ভোট দেওয়ার সক্ষমতা এই সরকারের নেই। তারা ভোট দিতেও চান না।
এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয়। সন্ধ্যার পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এএইচ