সদ্য কারামুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘এ জীবন আমার এক্সটেনশন লাইফ। মৃত্যুর দুয়ার থেকে আল্লাহ পাক আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীনের পথেই আমি সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমিসহ যেসব রাজনৈতিক নেতাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে, তা ছিল অন্যায়। যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তা ছিল জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যাকাণ্ড)। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব সফল না হলে আমার পক্ষে মুক্ত জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হত না। ফ্যাসিবাদী সরকার আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েই ছাড়ত। মহান আল্লাহর করুণায় নতুন জীবন পেয়েছি।’
বিজ্ঞাপন
মুক্ত জীবনে ফিরে এসে ঢাকা মেইলের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলের বাইরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘অতীতের সরকার দেশকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আইনের শাসনকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল। আইন-আদালতকে প্রভাবিত করে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। দেশে এক চরম অন্যায়-অবিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সে পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’

তিনি এ জন্য জুলাই গণঅভ্যুথানের নায়কদেরকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশকে পরনির্ভর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে চায়। এদেশে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি জিইয়ে রাখতে চায়। এর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এইসব শহীদদের পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। সামাজিকভাবে তাদেরকে হেয় করা হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়।’
১৯৫২ সালে রংপুরের বদরগঞ্জের লোহানিপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া আজহারুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমির এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। ২০১২ সালে ২২ অগাস্ট তাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি।
অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘১৩ বছর আমি কারাগারে কাটিয়েছি। এর মধ্যে ১০ বছর আমার ফাঁসির কনডেম সেলে কেটেছে। কারা প্রকোষ্ঠের শৃঙ্খলিত জীবনের সে স্মৃতি ভোলার নয়।’
‘যাদের সঙ্গে কারাগারে ছিলাম, সামনে থেকে অনেককেই ফাঁসি দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। জীবনের শেষ পর্যন্ত তাদের তেজোদীপ্ত ঈমান আমার মধ্যে সাহস সঞ্চার করেছে। মহান আল্লাহ তা’আলার অসীম করুণায় আমি বেঁচে আছি। আমাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত। আমাদের রাজনীতি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও ভরসার রাজনীতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অপরাধ একটাই, আমরা ওই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি। অতীতেও যুগে যুগে ঈমানদারদের ওপর এরকম জুলুম করা হয়েছে। কিন্তু ঈমানদাররা ভয় পায় না। ঈমানি শক্তিকে কোনোদিন নিঃশেষ করা যায় না।’
তিনি যেসব নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বলেন, ‘আজ থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীন। কখনো কল্পনা করিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসব। বাকি জীবন আল্লাহর পথেই আমি কাটাতে চাই।’
তিনি এ জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।