মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোরের নামে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘এই করিডোর শুধু বাণিজ্যের জন্য নয়, এটি একটি ষড়যন্ত্র। আরাকানদের করিডোর দিয়ে আমাদের সীমানায় আরেকটা ইসরায়েল গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে কিশোরগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম।
ফজলুর রহমান বলেন, ‘আজ সব বিষয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। এটি সুস্থ রাজনীতির সংকটের ইঙ্গিত দেয়। অনির্বাচিত শাসন দীর্ঘমেয়াদে একটি জাতির জন্য ধ্বংস ডেকে আনে।’
এ সময় রাখাইনে মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে, অথচ দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও স্বার্থ উপেক্ষিত। করিডোরের নামে বাস্তবে একটি ভিন্নধর্মী শক্তিকে স্থান দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আরাকানদের প্রবেশের সুযোগ দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি নতুন ‘ইসরায়েল’ গড়ে তোলা হচ্ছে, এমন শঙ্কা জনগণের মধ্যে রয়েছে। এটা দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র।’
পর্যটন খাতে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে ফজলুর রহমান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে সাধারণ মানুষ যেতে পারছে না। ফেরি ও স্টিমার অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয়রা হাজার কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি শুধু অব্যবস্থা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত বঞ্চনার অংশ, যা রাষ্ট্রীয় অবহেলার ফল।’
বিজ্ঞাপন
এরপর জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই। বিভাজনের রাজনীতি যদি বন্ধ না হয় এবং স্বচ্ছ নির্বাচন ও সমঅধিকারের পরিবেশ যদি নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে পড়বে।’
স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ তত্ত্ব তুলে ধরে জাতিকে বারবার বিভক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা একসময় দেশটাকে বিভক্ত করেছিল এই পক্ষ-বিপক্ষের নামে। এখন আবার সেই বিভাজনের রাজনীতি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অথচ এই সংকটকালে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশটাকে ভাগ করে কারও কোনো লাভ হবে না। স্বাধীনতার পর এ দেশকে বিভক্ত করেছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই বিভক্ত দেশকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন। কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে ডান আর কে বাম— এসব দিয়ে জাতিকে আর বিভক্ত করবেন না।’
সালাম বলেন, ‘আজ দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। একাত্তরের যুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু আজও আমরা গণতন্ত্র খুঁজে ফিরছি। এখনো তা সোনার হরিণ। ভোটাধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই— এটি কি সেই স্বাধীন বাংলাদেশ?’
দেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি জমি কিনতে পারব না কেন? এটা তো আমারই দেশ। অথচ ভারতের স্বার্থে করিডোর দেওয়া হচ্ছে। লাখো মানুষ পানির সংকটে ভুগছে, সেগুলো নিয়ে সরকারের কোনো চিন্তা নেই।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা চাই না এই দেশটা গাজায় রূপান্তরিত হোক। আবার এটাও চাই না, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে যেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
আব্দুস সালাম বলেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহে যে অবহেলা চলে আসছে, তা দূর করতে হবে। এজন্য সবার ঐক্য দরকার, বিভেদ নয়।’
সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব মন্টুর সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ হামিদ মোহাম্মদ জসিম ও এরফানুল হক নাহিদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল (ভিপি), সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নানসহ অনেকে।
এসএইচ/এএইচ
