জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা পর সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তিনটি পদ্ধতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেব। কোনটা সবচেয়ে ভালো হয় সে মতামত দেব।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রবাসীদের ভোটিংয়ের জন্য তিন প্রস্তাব (অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির ভোটিং সিস্টেম) উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেব। কোনটা সবচেয়ে ভালো হয় সে মতামত দেবো।
সহজ, বোধগম্য হবে ভোটিং পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুনিয়ায় কেনো সিস্টেমই ফুলপ্রুফ না। কোর্টশিপ করে বিয়েও ফুলপ্রুফ না। ফুলপ্রুফ হলে সংস্কার, বিপ্লবের প্রয়োজন হয় না। আমরা বিবেচনা করব সবচেয়ে যেটা সহজ, বোধগম্য হবে, সবচেয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে, যেটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে সেই প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা সম্মত হতে পারব বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই যে পারসেন্টেজের কথা বলা হচ্ছে এটার কোনো নির্ভরযোগ্যতা আছে কি না বলা যাবে না। একটা উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, যেমন সবচেয়ে বেশি ২৯ লাখ আছে ভারতে। আসলেই এটা সঠিক? ভারতে কি এতো মানুষ আছে? ইউটিউবের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সূত্র নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ প্রবাসে স্থায়ী হতে যায়, এই তালিকা কোথাও নেই। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি, কোথাও নেই। কত প্রবাসী ফিরে এসেছে সেই তালিকাও নেই। কাজেই এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় পরিচয়পত্র-এনআইডির সঙ্গে পাসপোর্ট বিবেচনা নিয়ে ভোটিং পদ্ধতি নির্ধারণের কথা বলে তিনি বলেন, আমেরিকার নাগরিক বাংলাদেশে আসলে তাদের দূতাবাসে রিপোর্ট করতে হয়। আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য এমন সিস্টেম নেই। আমি নিজে দেখেছি অনেক প্রবাসীর পাসপোর্ট নেই। অনেকেই আবার মৃত ব্যক্তির পাসপোর্টে প্রবাসে যায়। তাই শুধু এনআইডি বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করলে হবে। কেননা, সবার এনআইডি নেই। তাই পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। আবার অনেকের কোনোটাই নেই। এই বিষয়গুলোর কী হবে?
আমাদের দূতাবাসগুলোর যে অবস্থা তাতে তাদের ওপর ভরসা করলে রিস্ক হেবে। কারণ দূতাবাসগুলোতো প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সেবাই দিতে পারে না। কাজেই তাদের কতটুকু কাজে লাগানো যাবে প্রশ্ন থেকে যায়। দূতাবাসের সঙ্গে ইসির লোকবল যদি থাকে সেটা যদি করা যায়, ডাটাবেজটা থাকলে অনেক কাজে লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যাদের মর্যাদাবান বলি-ডাক্তার, শিক্ষক; বছরের পর বছর তারা টাকা পাঠান না। টাকা পাঠান শ্রমিকরা। অথচ মর্যাদা দেওয়া হয় যারা বড় বড় পদে আছে বা অ্যাম্বাসির সঙ্গে যাদের খাতির আছে।
জেলায় জেলায় প্রবাসীর সংখ্যার পার্থক্যের কথা সামনে তিনি বলেন, এটা ঠিক যে বহু জেলা আছে যেখানে প্রবাসী খুব কম। আবার কিছু জেলা আছে সেখাতে এতো প্রবাসী যে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করলে অসুবিধা নেই। তারা যদি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থাকেও যদি পাল্টে দিতে পারে দিক না।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২১ দলের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির নজরুল ইসলামের খানের নেতৃত্বে ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অংশ নেন।
অনিবন্ধিত দলের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর অ্যাডভোটেক জসিদ উদ্দিন, মতিউর রহমান আকন্দসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন।
এছাড়া নিবন্ধিত দলের মধ্য এলডিপি, সিপিবি, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, এনপিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিত, সাংস্কৃতি মুক্তিজোট, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাসদ, এবি পার্টি, গণাধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম, কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন।
আলোচনায় যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে- প্রবাসী ভোটিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ; সিস্টেম ডিজাইন ও কারিগরি সম্ভাব্যতা; যথোপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন; প্রবাসী ভোটিং সিস্টেমের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং আইনি, লজিস্টিক ও কার্যকরী চ্যালেঞ্জগুলো এবং সম্ভাব্য সমাধান।
এমএইচএইচ

