সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভোটে আস্থা ফেরাতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৩১ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ভোটে আস্থা ফেরাতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৩১ দাবি
সাইফুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: ঢাকা মেইল

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপন এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ৩১টি দাবি তুলে ধরেছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সঙ্গে বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, গত দেড় দশকে তিনটি নির্বাচন কমিশন দেশের সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে জনগণের ভোটের অধিকার হরণের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনব্যবস্থাকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে সরকার ও সরকারি দলের এক ধরনের অঙ্গ সংগঠনে অধঃপতিত করা হয়েছিল। এর ফলে ভোট ও নির্বাচন নিয়ে গণঅনাস্থা আর গণহতাশা দেখা দিয়েছে। এজন্য গত তিনটি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।

সাইফুল হক বলেন, আমরা মনে করি এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনসহ গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা আপনাদের প্রধান কর্তব্য। আপনারা দায়িত্ব নেবার পর এই পর্যন্ত আপনাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ভোটার তালিকা সম্পন্ন করাসহ আপনাদের বেশ কিছু তৎপরতা আমরা ইতিবাচক হিসাবেই বিবেচনা করছি। ডিসেম্বর ২০২৫ এ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় বিবেচনায় নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ ভোটারদের আশাবাদী করে তুলেছে। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই যে, জনআকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে পরামর্শ করে সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে অচিরেই কমিশন ত্রয়োদশ সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।

যে ৩১ দাবি তুলে ধরেছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি-

১। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকরী দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকা দরকার।


বিজ্ঞাপন


২। ভোটকেন্দ্রে কেবলমাত্র সিল দেওয়ার গোপন কক্ষ ব্যতীত পুরো কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা। ভোটকেন্দ্রের বাহিরে বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিদের প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা।

৩। ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি/সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা।

৪। এনআইডি কার্ড এর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা।

৫। কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না- এমন আইন প্রণয়ন করা।

৬। রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম ৫ হাজার টাকার অধিক মূল্য গ্রহণ করা যাবে না।

৭। নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন ফরম পেতে ১০ হাজার টাকার বেশি গ্রহণ করা যাবে না। সিডি/ভোটার তালিকা ক্রয় বাবদ কোনো ফি ধার্য করা যাবে না।

৮। পোস্টার বর্তমান প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে। তবে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার।

৯। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের প্রচারের ব্যবস্থা করা।

১০। সরকারি বেসরকারি গণমাধ্যমে সকল দলের সমান প্রচারের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

১১। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ লাখ টাকায় নিয়ে আসা।

১২। নির্বাচনের মনোনয়ন ফরমের সাথে হলফনামা জমা নিতে হবে।

১৩। নির্বাচন শেষে তিন মাসের মধ্যে হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে হবে। অসামঞ্জস্য দেখলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা থাকবে।

১৪। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি বছর তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশন ও দুদকে জমা দেওয়ার বিধান রাখা।

১৫। রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় সদস্য ছাড়া বাইরে থেকে কেবলমাত্র পাঁচ শতাংশ মনোনয়ন দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি কোন সংগঠিত সংঘের/ক্লাবের/প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকেন তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

১৬। যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারের জনআস্থা হারালে তাকে রিকল করার বিধান রাখা।

১৭।. যেকোন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখা।

১৮। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবস্থা বাতিল করা।

১৯।. সংসদ সদস্যরা কেবলমাত্র আইন প্রণয়নের কাজে থাকবেন। উন্নয়ন বরাদ্দে বা নানা প্রকল্পে তাদের যুক্ত থাকার বিধান বাতিল করা।

২০। না ভোটের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

২১। জাতীয় সংসদের পরিচালনা অধিবেশনের ব্যয় সংকোচন করা।

২২। সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রীদের একাধিক গাড়ি দেওয়া যাবে না। হলফনামায় যদি ঢাকায় ফ্ল্যাট বা বাড়ি থাকে সেসব সাংসদ/মন্ত্রীর নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

২৩। এমপি/মন্ত্রী কোন স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লাব, সংঘ, সমিতি, গীর্জা ইত্যাদি ধরনের কোন প্রতিষ্ঠানের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে না।

২৪। রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি/ মেয়র কেউ যাতায়াতের সময়ে জনগণের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটাতে প্রটোকলের নামে রাস্তা বন্ধ করা যাবে না।

২৫। নির্বাচনে টাকার খেলা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। সর্বোচ্চ ৫ জনের অধিক ব্যক্তি নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে অদৃশ্য ব্যয় রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া।

২৬। নির্বাচনে সন্ত্রাস, গুন্ডামী, প্রশাসনিক ম্যানিপুলেশান, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অনুভূতির ব্যবহার রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া।

২৭। দ্বৈত নাগরিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবং ভোট প্রদান করতে পারবেন না।

২৮। প্রবাসীদের ভোট প্রদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা চালু করা।

২৯। ভোট প্রদানে যেকোনো ধরনের বাধাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

৩০। ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করার প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বচ্ছ করা।

৩১। গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে নির্বাচন বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা রাখা।

এমএইচএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর