সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফের ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসবে বিএনপি, দিনভর বৈঠকে দিলো যত প্রস্তাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

ফের ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসবে বিএনপি, দিনভর বৈঠকে দিলো যত প্রস্তাব

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো থেকে পাওয়া সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দিনভর বৈঠক করেছে বিএনপি। দ্বিতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংসদ, নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন দলটির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তবে সব বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করা শেষ না হওয়াতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) আবারও কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি।

এর আগে রোববার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।


বিজ্ঞাপন


এসময় তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে মনোনীত হবেন তা নিয়ে পুরোপুরি একমত নয় বিএনপি। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে একমত তবে সংবিধানে উল্লেখ করে নয় আইন করে করাকে সমীচীন মনে করে বিএনপি।

অন্যদিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রতীক ব্যবহার না করার বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে একমত বিএনপি। 

এছাড়াও জেলা কমিশন কাউন্সিল নিয়ে নীতিগত একমত বিএনপি এটি আইন করে করা উচিত করে বলে মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

বিচার বিভাগের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ২২ তারিখ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের প্রায় সকল বিষয়ে আলাপ শেষ হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


তত্ত্ববধায়ক সরকার নিয়ে তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার ফিরলে স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর হবে। এতে গণতন্ত্র আরও ক্রিয়াশীল হবে।

জুলাই চার্টার স্বাক্ষর হলে সবাই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হবে বলেও মনে করে বিএনপি।

এছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রশ্নে ৪৮ (৩) এর পর নতুন বিধান যুক্ত করে রাষ্ট্রপতিকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আইনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে বিএনপি (রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন প্রসঙ্গে)। 

এর আগে দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতেও দিনের আলোচনা নিয়ে কথা বলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।

তখন তিনি জানান, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিল... এই চারটি ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন একরকম প্রস্তাব করেছে বিএনপি।

তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে আমরা শুনেছি আস্থা বিল এবং অর্থ বিলের ক্ষেত্রে প্রায় সবাই একমত। রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার্থে এবং সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার স্বার্থে আমরা চারটা বিষয় এখানে উল্লেখ করেছি… অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন… এই চারটা বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের বক্তব্য এবং ভোট প্রদান করতে পারবে। তাতে তাদের সংসদ সদস্য পদ বিলুপ্ত হবে না।

বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। তাতে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

‘নারী আসন সংখ্যা একশোতে উন্নীতকরণ’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বলেছি, নারীদের আসন সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ তে উন্নীত করার ব্যাপারে আমরা একমত। কিন্তু সেটা বিদ্যমান পদ্ধতিতেই মনোনয়ন হবে... সেটা আমাদের প্রস্তাবে বলেছি। তবে এটা (নারী আসন সংখ্যা উন্নীত) আমরা বলেছি, নেক্সট পার্লামেন্ট গঠন করার পরে… যখন তিনশো প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হবে এবং সংসদে এই সংক্রান্ত সংশোধনী গৃহীত হলে বর্তমানের ৫০ এবং আরও ৫০ নিয়ে যে ১০০ গঠিত হবে সেই ৪০০ সদস্য বিশিষ্ট সদস্য বিশিষ্ট সংসদে বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করে কোন পদ্ধতিতে তার পরবর্তী সংসদে নারী আসনের নির্বাচনটা হবে তখন সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।বর্তমানের জন্য বিদ্যমান পদ্ধতি আমরা মনে করেছি যে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট।

ভোটের ন্যূনতম বয়স ২১ এর ক্ষেত্রে বিএনপি দ্বিমত পোষণ করেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, সকল স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে বিরোধী দলের নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। আমরা বলেছি, এটা বাস্তবায়ন নয়। এটা সংসদের প্র্যাকটিস ও সংসদের ওপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তবে আমরা এভাবে একমত হয়েছি যে, কিছু কিছু স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে যেমন পাবলিক আন্ডারটেইকেন কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি এই জাতীয় কিছু কিছু কমিটি আমরা বিরোধী দলীয় মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা যায়… এই বিষয়ে একমত হয়েছি।  

রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকে বসেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সালাহউদ্দিন জানান, উচ্চ কক্ষে আসন সংখ্যা ১০০তে রাখার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সাথে একমত হয়েছে বিএনপি। উচ্চ কক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি, কারা আসবে, আনুপাতিক হারে আসবে কিনা সে বিষয়ে বিএনপি বলেছে যে, আগে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের সংশোধনীটা সংসদে গৃহীত হোক, দ্বি-কক্ষ গঠন হলে পরে সংসদে আলাপ করে নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করা ভালো হবে।

‘আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি প্রসঙ্গে’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ প্রাথমিকভাবে সংসদ উপস্থাপনের কথা উনারা বলেছেন। আমরা বলেছি, এটা সুবিবেচনা প্রসূত নয়। তাহলে কোনো চুক্তি রাষ্ট্র… যেমন বাণিজ্যিক চুক্তি আছে, বাইলেটারাল চুক্তি, বিনিয়োগ চুক্তি আছে যে গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নরমাল প্র্যাকটিস করা হয়। চুক্তির পরে সংসদে উপস্থাপনের যে বিধান যেটা আমরা যেন প্রয়োগ করি। এক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, ডিফেন্স যেসব চুক্তি হয়ে থাকে যেগুলোকে আমরা বলি যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তি সেগুলো ক্লোজড সেশনে করাটাই উত্তম।

‘ন্যায় পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপি বিদ্যমান আইনের যথাযোগ্য যুগোপযোগী করার জন্য নীতিগতভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে একমত হয়েছে’ বলে জানান সালাহউদ্দিন।

‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো’

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বলেছি যে, রাষ্ট্রপতিকে কি কি বিষয়ে ক্ষমতায়িত করে আইন প্রণয়ন করা যায় সেসব কিছু বিষয়ে এবং নিয়োগের কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। সেগুলো  নতুন আইন প্রণয়ন করে সংসদ প্রণীত করা যাবে। সেক্ষেত্রে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং রাষ্ট্রপতিকে মোর এম্পাওয়ার করা সেটা নিশ্চিত করা হবে।

‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন কাউন্সিল (এনসিসি) প্রস্তাবে একমত নই’

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা একটা নতুন ধারণা বাংলাদেশের পলিটিক্যাল কালচারে বা সংসদীয় কালচারে..  যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উভয় কক্ষের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতিসহ আরও কয়েকজনের কথা বলা আছে। এই বডিটার হাতে রাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ যেমন সব কমিশন, তিন বাহিনী প্রধান থেকে শুরু করে পিএসসি, দুদকসহ আরও যেসব সাংবিধানিক পদ আছে… এগুলো আমরা একমত নয়। কারণ কি? আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের মধ্যে এক্সিকিউটিভ ফাংশনটাকে এতো বেশি লিমিট করা হবে যে এক্সিকিউটিভ ও প্রধানমন্ত্রীর যে নামেই ডাকি তাদের আর রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এখতিয়ার বা রাষ্ট্র পরিচালনা দায় হয়ে যাবে। অথচ রেসপনসিবিলিটি থাকবে ইলেক্টেড প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে এবং সংসদে কাছে সেই নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অথচ তার কাছে তেমন কোনো পাওয়ার দেওয়া থাকলো না।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখা পক্ষে মত দিয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন তিনি পরপর দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এই প্রস্তাব বিএনপির জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা বলেছি, পরপর দুইবারের বেশি কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে যদি দুই বারের পর একবার গ্যাপ হয় তার পরবর্তীকালে জনগণ যদি সেই দলকে নির্বাচিত করে সেই পার্টি মেজরিটি পেয়ে যদি ডিসাইড করে তাহলে সেই একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতেও পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, কেন আপনারা ধরে নিচ্ছেন যে, সেইম লিডার বার বার হবেন। আমরা অপশনটা রাখতে চাই যে… বাধ্যবাধকতা করা যাবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ৯০ দিনের জন্য টেম্পোরারি আন ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট চান কেন? দিস ইজ ডটট্রেইন অব ন্যাসেসিটি। আমাদের পলিটিক্যাল হিস্ট্রিতে ও কালচারে দেখা গেছে উইথআউট কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট আমরা কোনো ইলেকশনই অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু করতে পারি না। যতদিন পর্যন্ত আমরা সেই কালচারে উপনীত না হতে পারব ততদিন পর্যন্ত আমাদের নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকারের বিধানটা রাখা উচিত। এই ভোটের জন্য আমরা ১৫ বছর আন্দোলনও করেছি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর